আবু মুছা রওসাদঃ
শিবচরের উপজেলার কাঁঠালবাড়ীর বাংলাবাজার পুরোনো ঘাটে বালুবোঝাই একটি বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা লেগে স্পিডবোট ডুবিতে তিন শিশু ও দুই নারীসহ ২৬ জনের মৃত্যু হয়। এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে সিবচর কাঠালবাড়ী হাজী ইয়াসিন মোল্লাকান্দি দোতার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাঙ্গণ এলাকায় শোকের মাতম বিরাজ করছে। স্বজনদের আহাজারিতে ওই এলাকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।
সোমবার (৩ এপ্রিল) সকাল কাঁঠালবাড়ীর বাংলাবাজার পুরোনো ঘাটে পদ্মা নদীতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলার বারুখালির মনির মিয়া (৩৮), হেনা বেগম (৩৬), সুমী আক্তার (৫) ও রুমি আক্তার (৩), ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার চরডাঙা গ্রামের আরজু শেখ (৫০), ইয়ামিন সরদার (২), মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার সাগর ব্যাপারী (৪০), কুমিল্লা দাউদকান্দির কাউসার আহম্মেদ (৪০), রুহুল আমিন (৩৫), মাদারীপুর জেলার রাজৈরের তাহের মীর (৪২) ও কুমিল্লা তিতাসের জিয়াউর রহমানের (৩৫), মাদারীপুরের শিবচরের হালান মোল্লা (৩৮), শাহাদাত হোসেন মোল্লা (২৯), বরিশাল তেদুরিয়ার আনোয়ার চৌকিদার (৫০), মাদারীপুর রায়েরকান্দি মাওলানা আব্দুল আহাদ (৩০), চাঁদপুর জেলার উত্তর মতলব মো. দেলোয়ার হোসেন (৪৫), নড়াইল লোহাগড়া রাজাপুর জুবায়ের মোল্লা (৩৫), মুন্সিগঞ্জ সদর সাগর শেখ (৪১), বরিশাল মেহেন্দিগঞ্জ সায়দুল হোসেন (২৭), রিয়াজ হোসেন (৩৩), ঢাকা পিরেরবাগ খেরশেদ আলম (৪৫), ঝালকাঠি নালসিটি এসএম নাসির উদ্দীন (৪৫), বরিশাল মেহেন্দিগঞ্জের মো. সাইফুল ইসলাম (৩৫), পিরোজপুর চরখামা মো. বাপ্পি (২৮), পিরজপুর ভান্ডারিয়া জনি অধিকারী (২৬) মোট ২৫ জনের নাম পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় দুপুরে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলামকে আহবায়ক করে ছয় সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
সদস্যরা হলেন- শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশাদুজ্জামান, শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন, শিমুলিয়া বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. শাহাদাত হোসেন, মাদারীপুর শিবচর চরজানাজাত নৌ-পুলিশ ইনচার্জ শেখ মো. আব্দুর রাজ্জাক ও নারায়ণগঞ্জ পাগলা বাংলাদেশ কোষ্টগার্ড স্টেশন কমান্ডার লে. আসমাদুল।
এদিকে স্পিডবোটের চালক শাহ আলমকে আহত অবস্থায় শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন
বলেন, দুর্ঘটনা এলাকা পরিদর্শন করেছি। যারা দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। মর্মান্তিক নৌ-দুর্ঘটনায় যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে সোমবার সকাল পৌনে ৭টায় ৩০জন যাত্রী নিয়ে স্পিডবোটটি ছেড়ে আসে। এ সময় মাদারীপুর কাঁঠালবাড়ী বাংলাবাজার পুরোনো ঘাটে থেমে থাকা বালুবোঝাই একটি বাল্কহেডে ধাক্কা দিয়ে ডুবে যায় স্পিডবোটটি। এ সময় সব যাত্রী পানিতে পড়ে যায়। পরে নদী থেকে একে একে ২৪টি লাশ উদ্ধার করা হয়। ৬ জনকে জীবিত উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে আরও দুজনের মৃত্যু হয়। স্থানীয় ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এ উদ্ধার কাজ পরিচালনা করেছেন।
Leave a Reply