ডেস্ক রিপোর্টঃ
আসন্ন শিবচর পৌরসভার নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ভোটারদের মাঝে। অনেকেই এ পদ্ধতিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও কেউ কেউ আবার এ নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করছেন।অনেকেই বলছেন,এখানকার অধিকাংশ ভোটারই গ্রামের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে ইভিএমের ব্যবহার সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই বললেই চলে। তবে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে ইভিএম পদ্ধতির ব্যবহার ইতিবাচক বলে দাবি করছেন অনেকে।
বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারী) রাতে দিকে শিবচর বাজারের একাত্তর চত্বরে শিবচর উপজেলা প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ইভিএম প্রদর্শনীতে উপস্থিত লোকজনের সাথে আলাপ করে এসব তথ্য জানা যায়।
এসময় রেজাউল হক নামে যাদুয়ারচর এলাকার একজন বলেন, ইভিএম পদ্ধতি প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় ভালো। তবে অধিকাংশ ভোটারই গ্রামের বাসিন্দা। তারা এখনো অনেকে ইভিএম পদ্ধতি বলতে কি বুঝায় তাই বোঝেনা। ইভিএম পদ্ধতির ইতবাচক দিকের তুলনায় নেতিবাচক দিকই বেশি। তাই এ আসনের জন্য ইভিএম পদ্ধতি কতটা কার্যকর হবে তা এখনে বোঝা যাচ্ছেনা।তাছাড়া আজ ইভিএম প্রদর্শণী হয়েছে। সেখানে স্বল্প সংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।আরো বেশী ভোটার এটা দেখলে বেশী ভালো হতো
উপজেলা চত্বর এলাকার ভোটার দিপু বলেন, ইভিএমে ভোট গ্রহন আমাদের জন্য সত্যিই সৌভাগ্যের বিষয়। আমার মনে হয় ইভিএমের মাধ্যমে স্বচ্ছতা বজায় রেখে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব। এর মাধ্যমে বোঝা যায় বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল বাংলাদেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।এটি ব্যবহার হলে জাল ভোটের কোনো সুযোগ নেই।
মনোয়ার নামে এক নতুন ভোটার বলেন,আগে বিদেশে ছিলাম, এবারই প্রথম আমি ভোট দিতে যাচ্ছি যা সত্যি আমার জন্য আনন্দের। তবে এবার নাকি আমাদের এখানে ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে যা আমাদের জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা।
ড. নুরুল আমীন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এখলাছ উদ্দিন চুন্নু বলেন, নতুন পদ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের আতুড় ঘর খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নানা অভিযোগ অনুযোগের খবর পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের শিবচর এ প্রক্রিয়া কে স্বাগত জানাই কিন্ত নতুন এ পদ্ধতির জন্য অনেক প্রচার প্রচারনা দরকার ছিল, এটা যথেষ্ট নয়। এ পদ্ধতিতে অসুবিধা কিছু লক্ষ্য করা যায়। যেমন -প্রশাসনিক বা নির্বাচন কমিশনে দায়িত্ব প্রাপ্তরা যদি সঠিক পদ্ধতিতে / নিরপেক্ষতা বজায় না রাখে। তা হলে ঝামেলা। যারা অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত তাদের জন্য জটিল হতে পারে। কেননা ভাষাগত সমস্যা হতেই পারে। নির্বাচিনের যারা দায়িত্বে থাকবেন এবং যারা ভোট দেবেন উভয় পক্ষের যথেষ্ট সময় নিয়ে পদ্ধতি কে জনগনের কাছে আরো সহজ করা উচিত।
প্রত্যেক ওয়ার্ড এ এ বিষয়ে সাধারণ ভোটার দের সচেতন করা দরকার বলে আমি মনে করি। তবে এ পদ্ধতিতে যে সুবিধা গুলো থাকে –
১.ভোট প্রদানে অনেক সময় বেচে যায় ২.পেপার নষ্ট হবার মতো অপচয় রোধ সহ পরিবেশ বান্ধব ৩. ভোট গননার ঝুকি বা
ঝামেলা এড়ানো সম্ভব ৪.ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া… অনেক দেশেই বাবহার হচ্ছে। ৫.প্রতিবন্ধী বা শারীরিক ভাবে অক্ষমরা ও সহজেই ভোট দিতে পারেন। ৬.বার বার ভোট দেয়া সম্ভব হয় না।৭.নির্ভুল ভোট গননা করা যায়।
এ বিষয়ে রিজিয়া বেগম মহিলা কলেজ
এর অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, শিক্ষাবিদ, কবি বাবুল আশরাফ বলেন,”ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম বিশেষ মর্যাদার অবস্থানে। সে তুলনায় সাধারণ মানুষ বেশ পিছিয়ে। ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারে এখনও তাদের অনেকেরই অনীহা। আর যে কোনো নতুন প্রবর্তনা নিয়ে সংশয় এবং অবিশ্বাস তো আমাদের মজ্জাগত। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ারও উপায় নেই। শুরু তো আমাদের করতেই হবে। শিবচরে ইভিএম এর ব্যবহারের উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাচ্ছি। এটা প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা। উন্নয়নকাণ্ডে বাংলাদেশের মডেল উপজেলা এবং মডেল পৌরসভা। এখানকার মানুষজন সারাদেশে খুবই ‘আপস্টার্ট’ বলে পরিচিত। এখানে ইভিএম এর ব্যবহার অবশ্যই কাম্য। তবে ইভিএম নিয়ে জনমনে যে ভীতি ও সংশয় তা দূর করতে এর ব্যবহারের সুবিধা, সুফল ও যৌক্তিকতা বোঝাতে প্রচারনা আবশ্যক। আর অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারনা চালিয়ে এটাকে মানুষের আস্থায় নিয়ে আসা দরকার’
উল্লেখ,পঞ্চম ধাপে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি শিবচর পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনে মোট ভোটার ১৭৯১৮ জন।এর মধ্য ৯ হাজার ১৭ জন নারী, ৮ হাজার ৯ শ ৬১ জন পুরুষ ভোটার এই প্রথম নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
নির্বাচনে কেন্দ্র নয়টি ও বুথ ৪৮ ইভিএম এর মাধ্যমে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে সাধারন কাউন্সিলর পদে মোট ৩১ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে মোট ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে এ নির্বাচন উপলক্ষে উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ করেন নির্বাচন কমিশন। এসময় মেয়র পদে কোন প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী না থাকায় আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী মো: আওলাদ হোসেন খানকে বেসরকারীভাবে বিজয়ী ঘোষনা করে নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান ।
Leave a Reply