ষ্টাফ করেসপন্ডেন্ট, শিবচরনিউজ২৪.কম
শিবচরে এক পরিবারের ৪ জনই বোবা। যারা উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের চরশ্যামাইল নদীরপাড় এলাকায় বসবাস করেন।এই বাক প্রতিবন্ধীদের কেউ নৌকা চালিয়ে কেউ বা আবার মাটি কেটে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাস করেন। সাজাহান ফকির (সাজা) ও ময়ুরী বেগমের সংসারের ৭ সন্তানের ৪ জনই বাক প্রতিবন্ধী। তাদের ৪ পুত্র ও ৩ কন্যা সন্তানের মধ্যে ৩ ছেলে, ১ মেয়েই বোবা। কথা বলতে পারে না। তাদের এই প্রতিবন্ধীত্ব জীবন জন্মগতই বলে জানিয়েছেন তাদের বাবা- মা । তবে এই ৪ বাক প্রতিবন্ধীর ১ জন ৬ বছর আগে থেকে ভাতা পান,২ জন তিন মাস ধরে পান।তবে অন্যজন এখনো প্রতিবন্ধী ভাতা পায় নি বলে জানিয়েছেন তারা।
সোমবার (১০ আগষ্ট) সকালে আড়িয়াল খাঁ নদীর উৎরাইল খেয়া ঘাটে বাক প্রতিবন্ধী দুলাল মাঝির নৌকা পার হওয়ার সময় স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা যায় তাদের পরিবারের ৪ জনই বাক প্রতিবন্ধী।নৌকা থেকে নেমে দুলালকে তোমাদের বাড়িতে যাব বললে নিরুত্তর হাঁটতে থাকে এই বাক প্রতিবন্ধী যুবক।
বাড়ির কাছাকাছি যেতে না যেতেই গিয়ে দেখা গেল সেখানে প্রতিবন্ধী আরেক ভাই দাঁড়িয়ে আছে।এরপর তাদের সাথে নিয়ে তাদের বাড়ি গেলে জানা যায় সকলের পরিচয়।
বাড়ি গিয়ে কথা হয় তাদের বাবা সাহজাহান ওরফে সাজা ফকিরের সাথে।তিনি বলেন,তাদের বড় ছেলে বাক প্রতিবন্ধী বাচ্চু (৩৪) গ্রামে মাটি কাটার কাজ করেন,মেঝো ছেলে নয়ন ফকির(৩২) সেও মাটি কাটার কাজ করেন তবে তিনি কোন ভাতা পান না এবং তার সেঝো ছেলে দুলাল (৩০) সে আড়িয়াল খাঁ নদীতে খেয়া চালান।আর তার মেয়ে ভাগ্য বেগম(২১) এরা চার ভাই বোন সকলেই জন্ম থেকে বাক প্রতিবন্ধী।
তবে অন্য ২ মেয়ে ও ১ ছেলের মধ্য ছেলে আকাশ (২৫) সে এলাকায় ট্রাক চালক আর দুই মেয়ে নুপুর (২৮) তাকে পাশ্ববর্তী সদরপুর উপজেলায় বিয়ে দেওয়া হয়েছে এছাড়া আরেক মেয়ে বাতাশী (২৩) বর্তমানে তালকপ্রাপ্ত।
বাড়ি গিয়ে তাদের বাবা মায়ের সাথে কথা বলার সময় কাছে আসতে শুরু করে এই চার ভাই বোন।নিজেদের পরিচয় দিতে বললে, তারা কথা না বলতে পারলেও নিজের ভাষায় আমাদেরকে কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করছেন তারা। তাদের সকলের অস্বাভাবিক আচরণ দেখে নিশ্চিত হওয়া গেল এরা চার জনই প্রতিবন্ধী। ৪ ভাইবোনদের অপ্রকৃতিস্থ বোবা চেহারায় স্পষ্টতই ভেসে উঠছিল প্রতিবন্ধীত্বের চাপ। মুখে কথা নেই, হাসি নেই। নিষ্প্রাণ মুখচ্ছবি দেখলে বোঝা যায়, কষ্টের তাড়নায় কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারছে না তারা। এক অভিশপ্ত জীবন নিয়েই তাদের বেঁচে থাকা।
প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের জীবন নিয়ে চিন্তিত মা ময়ূরী বেগম বলেন, ‘তার সাত ছেলে মেয়ের মধ্য ৪ জনই বোবা।আর একটা ছেলে আর দুইটা মেয়ে শুধু কথা বলতে পারে। কথা বলা মেয়েদেরকে বিয়ে দিয়েছেন। একটা মেয়ের স্বামীর সাথে ঘর করছে, আর একটা বাড়িতে তালাকপ্রাপ্ত। সে এখানেই থাকে। ৯/১০ জনের পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তারা। হয়তো তাদেরকে নিয়ে কোনো রকম চইল্যা যাইতাছি।তবে ওদের নিয়ে চিন্তায় আছি ”
এলাকার যুবক সেলিম ও রুবেল বলেন, ‘তারা জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। একটা পরিবারের ৭ জন ছেলেমেয়ের মধ্যে ৪ জনই প্রতিবন্ধী হলে কতটা কষ্ট তা শুধু তাদের মা-বাবাই বুঝতে পারেন। ওই পরিবারটি সত্যিকার অর্থেই কষ্টের মধ্যে আছে।একটা আমাগো এই ঘাটে নৌকা বায়,মানুষ পার করে। অভাব-অনটন তো আছেই।
এ বিষয়ে শিবচর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শাহ আলম বললেন, “বিগত অর্থ বছর পর্যন্ত ভাতার বরাদ্দ ছিল কম। এজন্য একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে ভাতা দেওয়া যায় নি।তবে সরকারী ভাবে ভাতার পরিমান বৃদ্ধি পাওয়ার এখন থেকে সকল প্রতিবন্ধীই ভাতার আওতায় আসবে।আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করবো”
Leave a Reply