ইমতিয়াজ আহমেদ (২১ এপ্রিল ২০২০):
মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের মগড়া পুকুরপাড় গ্রামের মৌলভী বাড়ির সম্পদ হিসেবে শতাব্দী ধরে আছে বিশাল আকৃতির এই ডেগটি। (ডেগ= বিয়ে বা কোন মজলিশে অনেক লোকের রান্নার জন্য ব্যবহৃত পাত্রবিশেষ) তবে সাধারণ ডেগ এর থেকে এই ডেগটির পার্থক্য অনেক।
বর্তমান যুগের বিয়ে বা অনুষ্ঠানের রান্না করার যে কোন পাত্রের চাইতে অনেকগুন বড় এই ডেগটি। তবে বিগত ৯০ বছরেও এই বড় পাত্রে কোন কিছু রান্না করা যায় নি। বিশালাকৃতির এই ডেগটি সম্পর্কে ডেগটির রক্ষক মৌলভী বাড়ির একাধিক ব্যক্তি জানান- আধ্যাতিক শক্তি সম্পন্ন মাওলানা খবির উদ্দিন আহমেদ আল কাদেরী প্রায় ১শত বছর পূর্বে বাগদাদ থেকে এই ডেগ এবং একটি উট এনেছিলেন।
তখন উটটি জবাই করে এই ডেগ এ করে রান্না করা হয়েছিল। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত এই ডেগ এ কোন কিছু রান্না করা সম্ভব হয়নি। মাওলানা খবির উদ্দিন আল কাদেরী সম্পর্কে তার উত্তরসূরীরা বলেন- মাওলানা খবির উদ্দিন আহ্মেদ আল কাদেরী তৎকালীন সময়ের একজন ধর্মানুরাগী ব্যক্তি ছিলেন। ধর্ম শিক্ষার জন্য তিনি আরব দেশগুলোতে ঘুরেছেন। পরিণত বয়সে দীর্ঘদিন বাগদাদের হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রা:) এর মাজারে ছিলেন বলে জানা যায়।
সাধনা শেষে নিজ দেশে ফেরার সময় উপহার স্বরূপ এই ডেগটি তাকে দিয়েছিলেন ওই মাজারেরই একজন খাদেম।
জনশ্রুতি আছে আধ্যাতিক ক্ষমতাসম্পন্ন মাওলানা খবির উদ্দিন আহ্মেদ আল কাদেরী ডেগ এর মধ্যে বসে নদী পথ পাড়ি দিয়ে নিজ বাড়িতে এসেছিলেন। তার মাজারের পাশে একটি খোলা ঘরে এই ডেগটি রাখা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য।
বিশাল এই ডেগটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে অনেক লোকজন আসে। ডেগটির উপর খোদাই করে লেখা রয়েছে- “ডেগ ওরুচে পিরানে পীর সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী– গোলাম ফকির– শ্রী মৌলবি খবির উদ্দিন কাদেরী, সাং- উৎরাইল, সন- ১৩১৯”। বাকি লেখাটুকু অস্পষ্ট। এই লেখা দেখেই ধারণা করা হয় ডেগটি বাগদাদ থেকে আনা এমন মন্তব্য স্থানীয়দের। ডেগটির উচ্চতা ৩ ফুট ৬ ইঞ্চি। এর চারপাশের আয়তন ১৪৮ ইঞ্চি।
ডেগ এর উপর দিকে কাঁধ বরাবর চারকোনে চারটি রিং রয়েছে। যার ওজন প্রায় ৪ কেজি করে। ডেগটি স্থানান্তর করার সময় এই রিং এর ভেতর বাঁশ জাতীয় কোন কিছু দিয়ে ধরে সরাতে হয়। ডেগটি স্থানান্তরের জন্য পূর্ণবয়স্ক ১৪ থেকে ১৫জন লোক লাগে এবং কমপক্ষে এগার মন খিচুরি এই ডেগ এর মধ্যে রাখা যায় বলে স্থানীয়রা জানান।
প্রায় ১শত বছর পূর্বে বাগদাদ থেকে এদেশে আনা হয় ডেগটি কিন্তু বিশাল আকৃতির এত বড় পাত্রটি কোন যুগের তৈরী তা জানা যায় নি।
(দেখতে যেতে চাইলেঃ শিবচরের উৎরাইল নয়াবাজার থেকে খাড়াকান্দি যাওয়ার রাস্তা দিয়ে কিছুদূর এগুলেই রাস্তার পাশে দেখা যাবে ডেগটি রাখা আছে।)
Leave a Reply