খালিদ জিহাদ খান, শিবচর(মাদারীপুর) প্রতিনিধি।
“আমি অন্যের বাড়ি কাজ করে খাই।নিজের ঘর ছিলোনা। একটি ছাপড়ার নিচে ঘুমাইতাম।এতোদিন পর আজ ঘর পেয়ে ভালই লাগছে।এই শেষ বয়সে এসে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর পেয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের জায়গা হলো। আজকের পর থেকে আর ছাপড়ার নিচে থাকতে হবে না।যুদ্ধ হইছিলো তার পরের বছরই নিজেদের বাড়ির জমি জমা না থাকায় পোলাপন গোরে নিয়ে ঢাহায় (ঢাকা)চলে যাই।পরে গ্রামে চলে আশি। মাঝে ছন দিয়ে ঘর আবার মাঝে মাঝে কলাপাতা দিয়ে ঘর বানইতো আমার পোলারা।খুব কষ্ট হইতো ঘরে থাকতে।ঠাডা গইড়ালে পরানে পানি থাকতো না। ছয়ডা পোলাপান লইয়া ছাপড়ার নিচে থাকতাম।আইজ শেখের বেটি আমাগো দিকে চাইছে, আল্লাহ তারে বাঁচাই রাখুক”
মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উপহার হিসেবে আশ্রয়ন প্রকল্প ২ এর আওতায় ঘর পেয়ে আবেগে আপলুতু হয়ে পড়েন শিবচর উপজেলার নলগোড়া এলাকার মৃত্যু কালাই খাঁর স্ত্রী আলেকজান (৬৫)
শনিবার (২৩ জানুয়ারি) গণভবন থেকে সারা দেশে একযোগে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব বাড়ি হস্তান্তর কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় বাড়ি পাওয়া ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শিবচর উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত উপজেলার নুর ই আলম চৌধুরী অডিটোরিয়াম এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৪৪ জন সুবিধাভোগীদের হাতে ঘর ও জমির দলিল তুলে দেওয়া হয়।
এসময় ঘরের দলিল হাতে পেয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে আলেকজান বলেন, যুদ্ধ হইছিলো তার পরের বছরই নিজেদের বাড়ির জমি জমা না থাকায় পোলাপনগোরে নিয়ে ঢাহায় (ঢাকা)চলে যাই।সেখানে খুব কষ্ট করি।কোন কোন সময় হোটেলে কাজ করি কোন সময় বাসাবাড়ির বাসন কোসন মাজি।তারপর ঢাকায় থাকতে না পেরে আইজ প্রায় ৪০ বছর ধইরা বাড়ি আইশা শিবচরের ফিরোজ খানগো বাড়িতে কাজ করি। তাদের বাড়ি সব কাজ করি।তাদের বুড়া বাপ মায়ের সেবা করছি।এভাবেই নিজের দুঃখের কথা বলতে গিয়ে চোখ মুছেন আলেকজান।
ঘর পাওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে কিছু সময় চুপ করে থেকে আলেকজান বলেন ” আমার ছয় সন্তানকে রেখে তোমার চাচায় ৪০ বছর আগে মারা গেছে।ঝড়-বৃষ্টির সময় ভাঙা ঘরে থাকতাম।ঠাডা গইরালে( বিদ্যুত চমকালে) পরানে পানি থাকতো না।খোলা আকাশের নিচে পলিথিন ও ত্রিপলের চাদরে ঢেকে রাখা তাঁবু বানিয়ে রাত্রিযাপন করছি।যে বাড়িতে কাজ করি তাগো বাড়ি থেকে কাপড়ে পেঁচিয়ে অগো (নিজের সন্তান) জন্য ভাত নিয়ে আসতাম।খুব কষ্ট করছি বাবা (সাংবাদিককে)।আল্লায় শেখ হাসিনারে বাচাঁইয়া রাখুন, তার কারণেই ঘর পেয়েছি”
এসময় তিনি আরো বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর দুই মেয়েকে বিয়ে দিছি।আর চার ছেলে তারা কেউ কৃষিকাজ করে,কেউ ড্রাইভারী করে।আর এক পোলা প্রতিবন্ধী।একসময়ে ছেলেদের উপর নির্ভর হয়ে পড়েছিলাম। ওরা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে।এখন ওদের সংসার হইছে।নাতি নাতনিদের নিয়ে ওরা আলাদা হয়েগেছে।কেউ আমার খোঁজ রাখেনা।তাই আমি অন্যের বাড়ি কাজ করে খাই।
শিবচর উপজেলা প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তার দফতর থেকে জানা গেছে, উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ‘নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় শিবচরে ২৬৬ টি ঘর বরাদ্দ পাওয়া গেছে।এদের মধ্য উপজেলা নিলখী, বহেরাতলা দক্ষিন, সন্নাসীরচর ও কুতুবপুর ইউনিয়নে ৪৪ টি ঘরের নির্মান কাজ সম্পন্ন হয়েছে।আজ এই ৪৪ জন ঘরের মালিকের কাছে তাদের দলিল হস্তান্তর করা হয়।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন “মুজিব বর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে ঘোষনা যে একজন মানুষ ও গৃহহীন থাকবে না,সেই ধারাবাহিকতায় আমরা আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় শিবচর উপজেলায় ২৬৬ টি ঘর আমরা বরাদ্দ পেয়েছি।আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সে প্রকল্পের শুভ উদ্ভোদন করেছেন।আজ আমরা শিবচরের ৪৪ টি পরিবারের কবুলিয়ত ও অন্ন্যান্ন কাগজপত্র তুলে দিয়েছি।বাকি ঘরগুলোর কাজও চলমান রয়েছে।পর্যায় ক্রমে তাদেরকেও ঘর বুজিয়ে দেওয়া হবে”
এসময় উপস্থিত ছিলেন মাদারীপুর জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক আজহারুল ইসলাম, উপজেলা চেয়ারম্যান আঃ লতিফ মোল্লা, পৌর মেয়র আওলাদ হোসেন খান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বিএম আতাউর রহমা,মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাহিমা আক্তার, উপজেলা বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীসহ জেলা ও উপজেলায় কর্মরত বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক বৃন্দ।
Leave a Reply