মাদারীপুর প্রতিনিধিঃ
মাদারীপুরে প্রাইভেট কারে ছাগল চুরির ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি তুহিন দর্জীসহ পাঁচ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারী) দুপুর ৩টার দিকে জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করা হলে আদালতের বিচারক সাইদুর রহমান তাদের কারাগারে পাঠানো নির্দেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালত পুলিশের পরিদর্শক রমেশ চন্দ্র দাশ।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে সদর উপজেলার পখিরা এলাকা থেকে একটি প্রাইভেট কারে ছাগল চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় হাতেনাতে তুহিন দর্জীসহ তার চার সহযোগিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাদের নামে সদর মডেল থানায় ছাগল চুরির অভিযোগ এনে লোকমান মালোত নামে এক কৃষক মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় ছাত্রলীগ নেতাসহ চার সহযোগি জুবায়ের হাওলাদার, রানা বেপারী, রবিউল ইসলাম ও মাহবুব তালুকদারকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। তুহিন দর্জি শহরের ইটেরপুল এলাকার ও জেলা ইমারত শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সদর ঘটমাঝি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাকির দর্জীর ছেলে।
মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে সদর উপজেলার পখিরা এলাকা থেকে নিজস্ব একটি প্রাইভেট কারে স্থানীয় লোকমান মালোতের পালিত একটি ছাগল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিল। বিষয়টি স্থানীয় লোকজন দেখতে পেয়ে ধাওয়া দিলে তারা সেখান থেকে দ্রæত সটকে পরে। পরে টইল পুলিশকে জানালে পুলিশ চুরি হওয়া ছাগল বহন করা প্রাইভেট কারটি গতিরোধ করে। পরে ছাত্রলীগ নেতা তুহিন দর্জীসহ তার চার সহযোগিকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এ সময় চুরির কাজে ব্যবহৃত ওই প্রাইভেট কার জব্দ ও ছাগল উদ্ধার করা হয়।
এ সম্পর্কে সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শহীদুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতা তুহিনসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে ছাগল চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে ৩৭৯/৪১১ ধারায় একটি চুরির মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলায় শুক্রবার দুপুর ৩টার পরে গ্রেপ্তার সবাইকে আদালতে হাজির করা হয়। এ ছাড়াও চুরি হওয়া ছাগলটি প্রকৃত মালিকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং জব্দ হওয়া প্রাইভেট কারটি পুলিশের হেফাজতে রাখা আছে।’
এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, গত দুই মাসে পখিরা এলাকা থেকে আরও ৫টি গৃহপালিত ছাগল খোঁয়া গেছে। তুহিন ও তার সহযোগি এই চুরির সাথে জড়িত রয়েছে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তুহিন দর্জীর ভাই শিহাব আল শাহীন বলেন, ‘আমার ভাইয়ের সম্মানহানি করার জন্যই ষড়যন্ত্র করে এ কাজ করা হয়েছে। তুহিনকে এমন একটি হাস্যকর মামলায় ফাঁসানো হয়েছে তা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যে প্রণোদিত। আমরা এ ঘটনায় সঠিক তদন্তের দাবি জানাই।’
ছাত্রলীগ নেতার ছাগল চুরির ঘটনাটি ছাত্রলীগ তথা আওয়ামী লীগেরও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে বলেও মত দিয়েছেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা। জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ছাত্রলীগের দায়ভার ছাত্রলীগের নিতে হবে অন্য সংগঠন এর দায় নেবে না। এমন একটি লজ্জাজনক ঘটনায় আমরা বিব্রত।’ তিনি আরও বলেন, ‘জেলা ছাত্রলীগের কমিটি অনেক আগেই উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। পুরানো কমিটির কিছু নেতারা বেপরোয়া হয়ে এমন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটাচ্ছে। তাই পুরাতন কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটির দরকার। আর নতুন কমিটিতে যাচাই বাছাই ও সংগঠনের নিয়ম মেনে করা হলে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না বলে আমি বিশ^াস করি।’
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হোসেইন অনিক বলেন, ‘ছাত্রলীগ বৃহৎ সংগঠন। তাই অনেকে খারাপ মানুষও কোটায় পদ পেয়ে যায়। ছাগল চুরির দায়ে অভিযুক্ত তুহিনও কোটায় পদ পাওয়া একজন। আমরা তাকে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ করবো। তাদের সিদ্ধান্ত মেনেই আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’
Leave a Reply