শিবচরনিউজ২৪.কম ডেস্কঃ
সময়ের সাথে সাথে করোনার থাবা দীর্ঘ হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে এই দুর্যোগকালে অর্থনৈতিক প্রবাহও থমকে গেছে। একই সাথে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপনও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
করোনার ক্রান্তিকাল কবে কাটবে কারো জানা নেই। আমরা সবাই এ ব্যাপারে আঁধারে রয়েছি। পরিস্থিতি বিচারে আদৌ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব কি না তা অনিশ্চিত।
সংক্রমণের এই সময়টিতে জীবিকা নির্বাহের জন্য মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি, কর্মস্থল কোনো কিছুই আর আগের মতো নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি বন্ধ থাকবে। এতে বেকার হয়ে বাড়ি বসে আছেন লাখ লাখ মানুষ। অনেকেই কাজ নেই তো বেতনও নেই অবস্থায় আছেন। এদের মধ্যে অনেকে আছেন যাদের বসবাস দারিদ্র সীমার নিচে বা কাছাকাছি। মধ্যবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্তরাও খুব একটা ভালো নেই। কারণ সবারই অর্থনৈতিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
চাকরি-বাকরি বা ব্যবসার জন্য মানুষ বিভিন্ন শহর বা শহরতলীতে বাস করেন। এই জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই ভাড়া বাসায় থাকেন। তাদের উপার্জনের অন্তত ৪০ থেকে ৫০ ভাগ অংশই খরচ হয় বাসা ভাড়ার পিছনে। বাকি অংশে পরিবারের খরচ, সন্তানের পড়াশুনা, চিকিৎসা সেবাসহ অন্যান্য চাহিদা মেটানোর কাজ চলে। বেশিরভাগ মানুষই তাদের উপার্জন থেকে সঞ্চয় করতে পারেন না। কারো কারো ধারদেনা করেও চলতে হয়।
বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি আমাদের জনজীবনকে আরো দূর্বিষহ করে তুলেছে। আমরা যারা বাসা ভাড়া দিয়ে থাকি, দেশের এই ক্রান্তিকালে কীভাবে ঠিকঠাক বাসা ভাড়া দেবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। কিছুদিন আগে শোনা গিয়েছিল সরকার বাড়ি ওয়ালাদের দুই মাসের জন্য বাসা ভাড়া মওকুফ করতে বলবেন। এতে অনেক ভাড়াটিয়া আশায় বুক বেঁধেছিল। কিন্তু পরে জানা গেলো সেটা এক ধরনের গুজব।
উন্নত দেশগুলোতে এটা সত্যিই হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে কানাডার কথা বলা যেতে পারে। সে দেশের সরকার নাগরিকদের সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছেন। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সেখানে বাড়িভাড়া থেকে শুরু করে সমস্ত নাগরিক খরচ সরকার যোগাবে।
তবে এটা আমাদের দেশে সম্ভব নয়। কারণ আমরা এখনো আর্থিকভাবে তাদের মতো স্বচ্ছল নই। তবে সরকার এ ব্যাপারে কিছুটা এগিয়ে এলে অনেকেই নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখবেন। অনেক বাড়ি ওয়ালাও ইতোমধ্যে বাড়িভাড়া মওকুফ করে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তবে সবাই যে এটা পারবেন না সেটা বলাই বাহুল্য।
একজন বাড়ি ওয়ালাকে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল পরিশোধ করতে হয়। দুর্যোগের এই সময়ে বাড়ি ভাড়া মওকুফ করে দিলে তাদের চলা দায় হয়ে পড়বে। অনেক বাড়ি মালিক আছেন, যাদের একমাত্র আয়ের একটা উৎসই হলো বাসা ভাড়া। হয়েতো ব্যাংক লোন নিয়ে বাড়িটি করেছেন। বাসা ভাড়া উঠিয়ে লোন শোধসহ নিজের চলতে হয়। তারা যদি বাসাভাড়া না পান তাহলে কীভাবে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল পরিশোধ করবেন? কীভাবে লোন শোধ করবেন? চলবেনই বা কীভাবে? সরকারের পক্ষ থেকে বাড়ি ওয়ালেদের এসব বিল মওকুফ করে দিলে তারাও হয়তো বাড়ি ভাড়া মওকুফের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন।
বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসতে আরও দেরি হবে। আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরেও অর্থনৈতিক প্রবাহ আগের অবস্থায় যেতে অনেকদিন সময় লাগবে। তাই এ অবস্থায় বাড়ি মালিক এবং ভাড়াটিয়া উভয়ের কথা বিবেচনা করে এ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এটি এখন সময়ের দাবি।
সরকার যদি সংক্ষিপ্ত পরিসরেও এগিয়ে আসে, তাহলে জনগণ অনেকটাই স্বস্তি পাবে। দেশের জনগণকে বাঁচাতে বিষয়টি বিবেচনা করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি অনুরোধ রইলো।
লেখক : শাহাদাৎ হোসেন মুন্না, ভাইস চেয়ারম্যান
সৃষ্টি হিউম্যান রাইটস সোসাইটি।
Leave a Reply