গত ৩০ শে ডিসেম্বর ২০১৯ চীনের উহানে করোনার প্রার্দুভাব শুরু হয়। বর্তমানে ২০০টি দেশের অধিক মানুষ এই মহামারির করোনার শিকার। চিকিৎসা বিজ্ঞান এর কোন ঔষধ বা প্রতিষেধক এখনও আবিস্কার করতে পারেনি।সারা বিশ্ব আজ কোভিড-১৯ নামক এক অভিন্ন শত্রুর মোকাবিলা করছে। প্রাণপণে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে এই অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে। আর ঘরে বসে থাকা এই যুদ্ধ জয়ের অন্যতম কৌশল। শুধু ঘরে বসে থাকা নয় একের পর এক লকডাউন হচ্ছে পৃথিবীর বড় বড় শহর। এমন দৃশ্য কেউ আগে কখনো দেখেছে কি-না তা আমাদের জানা নেই।
বাংলাদেশেও এ সংক্রামক ব্যাধির কালো থাবা বিস্তার করেছে। এটা অনুধাবন করতে পেরেই সরকার দেশের মানুষকে আহ্বান জানিয়েছে ঘরে থাকার জন্য। তবে সরকারের সময়োচিত হস্তক্ষেপে বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় দেশে করোনাভাইরাস এখনো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই ভাইরাসটির কোনো প্রতিষেধক এখনো তৈরি হয়নি। সে কারণে আপাতত সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।
সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ প্রতিদিন স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য সাবান দিয়ে নিয়মিত হাত ধোয়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারসহ বিভিন্ন উপদেশ দিচ্ছে। সেইসঙ্গে করোনা মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে শুরু করে চিকিৎসকসহ সবাই যে বিষয়টির ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তা হলো সচেতনতার পাশাপাশি সবাইকে বলা হচ্ছে— ঘরে থাকুন।
মানুষের ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার আহ্বান জানানো হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সমাজবদ্ধ জনগোষ্ঠীর এই আবহমান বাংলায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা খুবই কঠিন কাজ। কিন্তু কোনো উপায় নেই, বিধি বাম সংক্রামক ব্যাধি কোভিড-১৯ থেকে বাঁচতে এর কোনো বিকল্প নেই। দেশের কোনো স্থানে করোনা সন্দেহ করা হলে সেই এলাকা ‘লকডাউন’ করে দেওয়া হচ্ছে। করোনা উপসর্গ দেখা দিলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে কাছাকাছি পরীক্ষাগারে পাঠানোর প্রক্রিয়াও গতি পেয়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন পরিচালক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি গত আট দিন রাজধানীর কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
ওয়ার্ল্ডওমিটার ও জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে সংস্থাটির ওয়েবসাইটে দেখা যায়, বিশ্বজুড়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৫ হাজার ৪৪৫ জনে। আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৮ জন। আর সুস্থ হয়েছেন তিন লাখ ১৬ হাজার ৪৮২ জন।
বুধবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫৪ জন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১৮ জনে। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ জনে। করোনায় সুস্থ রোগীর সংখ্যা ৩৩ জন। আইইডিসিআর বলছে, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়ে গেছে। এখন ক্লাস্টার থেকে রোগী আসা শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় সাধারণ ছুুটির মেয়াদ বেড়েছে।
সরকার যেকোনোভাবে মানুষকে ঘরে রাখতে চাইছে। মানুষের স্থানান্তর বন্ধ, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ সরকারি নির্দেশনা মানতে কড়াকড়ি বেড়েছে। কেউ যাতে ঢাকায় ঢুকতে এবং ঢাকা থেকে বেরোতে না পারে সে বিষয়েও পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অনাকাক্সিক্ষত মহামারি মোকাবিলায় সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা অত্যন্ত সময়োপযোগী। পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সরকারের একার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। দেশের নাগরিকদেরও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান মৃত্যু ঠেকাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক দূরত্বের সময়সীমা ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের দেশেও চেষ্টা করা হচ্ছে এই দূরত্ব মেনে চলা। সকল মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং মেনে চলতে হবে কঠোরভাবে যতদিন না আমরা শঙ্কামুক্ত হচ্ছি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য কিছু পরামর্শ নিচে দেওয়া হলো-
Leave a Reply