সদরপুর প্রতিনিধি:
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় বাড়িতে ঢুকে ইউপি চেয়ারম্যানের শিশুপুত্রকে কুপিয়ে হত্যাকারী এরশাদ মোল্যা (৩৫) আত্মহত্যা করেছেন।
বুধবার (১৮ মে) সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে তিনি সদরপুর টিএন্ডটি ফোনের টাওয়ার থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন।
একই দিন বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ঢেউখালী ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বয়াতির ৮ বছর বয়সী ছেলে আল রাফসানকে কুপিয়ে হত্যা করেন এরশাদ।
এ সময় চেয়ারম্যানের স্ত্রী দিলজাহান রত্না (৩৯) এগিয়ে এলে তাকেও কোপানো হয়।
রত্নাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধী দেওয়া হচ্ছে। ওই ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা অভিযুক্তের বাড়িঘরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাফসানকে হত্যা ও তার মা রত্নাকে জখম করে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে অভিযুক্ত এরশাদ মোল্যা সদরপুরে টিএন্ডটি টাওয়ারের উপড়ে চড়ে বসেন। দেখতে পেয়ে জনতা তাকে লাফ না দিতে অনুরোধ করে।
তারা বিষয়টি পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকেও জানায়। তবে পুলিশ আসার আগেই সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে এরশাদ মোল্যা টাওয়ার থেকে লাফ দেয়। পরে সদরপুর থানার এসআই কৃষ্ণের নেতৃত্বে পুলিশ সেখানে পৌঁছে।
এসআই কৃষ্ণ জানান, তারা টাওয়ার থেকে লাফিয়ে পড়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠাচ্ছেন। তবে এটি কার লাশ সে ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি।
জানা গেছে, ঢেউখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান সদরপুর উপজেলা সদরে পোস্ট অফিসের পাশে তার নিজস্ব একটি বাসভবনে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। বুধবার দুপুর পৌনে চারটার দিকে বাড়ির পাশের একজন নারী তার স্ত্রীর চিৎকার শুনে এগিয়ে গিয়ে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাতে দেখেন। পরে পাশের দোকানি ও লোকজন ছুটে এসে পাশে রাফসানের রক্তাত্ত লাশ দেখতে পায়।
স্থানীয়রা তাদের প্রথমে সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সেখান থেকে তাকে ফরিদপুরের আটরশির বিএসএমএমসি হাসপাতালে পাঠায়।
আহত দিলজাহান রত্না বলেন, ঢেউখালীর সানু মোল্যার ছেলে এরশাদ মোল্যা এ হামলা করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, তিনদিন আগে ঢেউখালী ইউপি পরিষদে একটি বিষয় নিয়ে সালিশ হয়। ওই সালিশে দোষী সাব্যস্ত হয়ে এ হামলা করে এরশাদ।
সদরপুর থানার এসআই রেজাউলের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে।
সদরপুর থানা ওসি সুব্রত গোলদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তারা এ ঘটনা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন।
সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ওমর ফয়সাল বলেন, রাফসানকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। দিলজাহানের অবস্থা গুরতর হওয়ায় তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ফরিদপুরে স্থানান্তর করা হয়েছে।
স্থানীয়রা তাদের প্রথমে সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সেখান থেকে তাকে ফরিদপুরের বিএসএমএমসি হাসপাতালে পাঠায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ঢাকায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহর ভাইয়ের কুলখানি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। তিনি ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন।
তবে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও ফোনকল রিসিভ করেননি চেয়ারম্যান মিজান।
ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুর রহমান বলেন, চেয়ারম্যানের স্ত্রীর শরীরের ক্ষতগুলো মারাত্মক। অস্ত্রোপচার চলছে। তিনি শঙ্কামুক্ত নন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) ফাহিমা কাদের চৌধুরী বলেন, দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে জখম করায় ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলে রাফসান ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এ ঘটনায় আতহ হয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যানের স্ত্রী দিলজাহান। তাকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
Leave a Reply