শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয়।একসময় দেখা,পলকেই ভালো লাগা।হলো প্রেম।আর সেই প্রেমের টানে ইন্দোনেশীয় তরুণী ইফহা এলো শিবচরে। কাজের সুবাদে এই তরুনীর সাথে সিঙ্গাপুরে পরিচয় হয় মাদারীপুর জেলাার শিবচর উপজেলার তরুণ শামীম মাদবরের।
জানা যায়, গত ২ বছর আগে (২২ ফেব্রুয়ারী ২০২২) ইন্দোনেশীয় তরুনীর সাথে সিঙ্গাপুরে থাকা অবস্থাতেই প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে শামিমের ।এর পরে পরস্পরের মধ্যে হয় বোঝাপড়া আর ভালোলাগা। এরপরে আরও গভীর হতে থাকে সেই সম্পর্কে । এভাবেই দুজন দুজনকে ভালো বেসে কেটে যায় দুই বছর। অবশেষে প্রেমের সম্পর্ক গড়ায় বিয়েতে!
গতকাল প্রেমের ২ বছরের (২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪) উপলক্ষে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের বড় কেশবপুর গ্রামের শামীম মাদবরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ইন্দোনেশীয় তরুনী ইফহা। আজ সামাজিকভাবে ঝাঁক জমকভাবে এ বিয়ের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
২৯ বছর বয়সী শামীম ওই এলাকায় লাল মিয়া মাদবরের ছেলে।
পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সাথে আলাপ করে জানা যায়,গত ৫ বছর আগে পরিবারের লোকজন নিয়ে একটু ভালো থাকার আশায় সিঙ্গাপুর যান শামিম।সেখানে পরিচয় হয় ওই তরুনীর সাথে।পরিচয়ের এক পর্যায়ে প্রেমের সম্পর্কে শুরু হয়।
গত জানুয়ারি মাসের ৩০ তারিখ দেড় মাসের ছুটিতে বাড়ি আসেন শামীম মাদবর। বাড়িতে এসে বিদেশী তরুণীর সাথে প্রেমের সম্পর্কের কথা পরিবারকে খুলে বলেন। ভীনদেশী তরুণীকে বিয়ে করার ইচ্ছা পরিবারের কাছে বলেন। প্রথমে শামীম মাদবরের পরিবার মেনে নিতে না চাইলেও তরুনীর সাথে কথা বলে বিয়েতে মত দেন তারা।
অবশেষে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে আসেন ইন্দোনেশীয় তরুণী ইফহা। শামীম মাদবরের পরিবার স্বানন্দে গ্রহন করেন ওই তরুণীকে। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার পারিবারিকবাবে বিয়ে হয় তাদের।শুক্রবার(২৩ ফেব্রুয়ারি) জাঁকজমক ভাবে অনুষ্ঠিত হয় বিয়ের অনুষ্ঠান।
সালমা আক্তার নামে শামীম মাদবরের নিকটাত্মীয় বলেন,’ ইফহা ইন্দোনেশীয় তরুণী হলেও কাজের জন্য সিঙ্গাপুরে থাকেন। তবে ওর পরিবার ইন্দোনেশীয়া থাকেন। আমাদের শামীম সিঙ্গাপুর থাকেন প্রায় ৬ বছর ধরে। ওখানে থাকা অবস্থাতেই ইফহার সাথে শামীমের পরিচয়। আমরা ফোনে ওই মেয়ের সাথে বিভিন্ন সময়ে কথা বলেছি। মেয়ে খুবই ভালো। বাড়িতে ছেলের পরিবার প্রথমত বিয়েতে মত না দিলেও পরে সবাই রাজি হয়। মেয়ের পরিবারের সাথেও আমরা কথা বলেছি। তারাও রাজি। পরে গত ১৭ তারিখে ইফহা বাংলাদেশে আসে।’
এদিকে বিদেশী তরুনীর বিয়ের অনুষ্ঠান দেখতে ভিড় জমায় এলাকাবাসী।দুপুরে প্রায় ৮ শতাধিক মানুষের খাবার আয়োজনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয় বিয়ের অনুষ্ঠান।এলাকায় বিদেশি তরুনীকে দেখতে ভীড় করছেনে অনেকেই।
প্রতিবেশীরা বলেন,’বিদেশী মেয়ের সাথে বিয়ের ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। মেয়েকে দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসে ভিড় করে।’
শামীম মাদবরের বাবা লাল মিয়া মাদবর বলেন,’বিদেশী মেয়েকে আমার ছেলে পছন্দ করেছে। মেয়েও ছেলেকে পছন্দ করে। আমরা ওই মেয়ের পরিবারের সাথে কথা বলেছি। তারাও বিয়েতে রাজি হয়েছেন। শামীম আসার কিছুদিন পর বিদেশী মেয়েও বাড়িতে আসে। শুক্রবার শামীম ও আমার ছোট ছেলে সুমনের একত্রে বিয়ে দিয়েছি। এক সাথে অনুষ্ঠান করেছি। সবাই আনন্দিত। এখন ওরা ভালো থাকুক এই দোয়া করি।’
শামীম বলেন,’ইফহা ইন্দোনেশীয়ান তরুনী। তবে সিঙ্গাপুর থাকে। ওখানে থাকা অবস্থাতে প্রথম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরে দেখা-সাক্ষাত হয়। ঘণিষ্টতা বাড়ে। সম্পর্কে প্রেমে গড়ায়। আমাদের কারো পরিবারই রাজি ছিল না। আমরা পরস্পরের পরিবারকে বুঝিয়েছি। পরে তারা বিয়েতে রাজি হয়। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বিয়ের জন্যই ইফহা বাংলাদেশে আসে।সামনে হলিডে ওদের বাড়ি যাবো।পরে পবিত্র হজ্ব করারও চিন্তা ভাবনা আছে।
ইফহা বলেন,’আমি খুবই খুশি শামীমকে পেয়ে।প্রথম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওর সাথে পরিচয়। পরে আমাদের দেখা হয়। ভিডিও কলে নিযমিত কথা হতো।ও খুবই ভালো মনের মানুষ।চরিত্রও ভালো।কে বেশী ভালোবাসে একে অপরকে? এসময় ইফফা বলে, আমি ওকে বেশি পছন্দ করি।আমার পরিবার প্রথমে ভয় পেতো।পরে সবাই রাজি হয়।সম্মতি দেয়।সে এখন আমার স্বামী।আগামী মাসে আমরা সিঙ্গাপুর যাবো। ওখান থেকে ইন্দোনেশীয়া বেড়াতে যাবো বাবা-মায়ের কাছে।’
বাংলা ভাষায়,আমি তোমাকে ভালোবাসি, সবাই ভালো, ও গোসলে গেছেসহ কয়েকটি বাক্য শিখছেন ইফফা।এছাড়াও ইউটিউব ও শামীমসহ পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে আলো সুন্দরভাবে বাংলা ভাষায় কথা বলতে চান এই তরুনী।
Leave a Reply