মাদারীপুর প্রতিনিধি:
মাদারীপুরে হাট-বাজার ইজারার দখল নেওয়ার ও বালু ব্যবসার দ্বন্ধে জন্য স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাইফুল সরদার সহ ৩ জনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর এলাকার বালু ব্যবসায়ী হোসেন সরদার (৬০) ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শনিবার (৮ মার্চ) রাতে ৪৯ জনকে আসামী করে মাদারীপুর সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহত সাইফুলের মা সুফিয়া বেগম।
পুলিশ ও স্থানীয় সুত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুরে কীর্তিনাশা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল সরদার। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব হয় একই এলাকার শাজাহান খানের (শাজাহান মোহরী) সাথে। এরই জেরে খোয়াজপুর সরদারবাড়ি জামে মসজিদের সামনে একা পেয়ে সাইফুলের উপর হামলা চালায় শাজাহানের লোকজন। এ খবর আশপাশে ছড়িয়ে পড়লে সাইফুলের দুই ভাই অলিল ও আতাউরসহ প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসেন। পরে মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করে নিজেদের আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন সাইফুল ও তার ভাই আতাউর। এসময় মসজিদের ভিতরে ঢুকেই তাদের দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করে হামলাকারীরা। এসময় কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয় তাদের আরেক ভাই অলিল সরদারসহ তাদের দলীয় পলাশ সরদার (১৭) ও তাজেল হাওলাদারকে (১৮)। এ ঘটনা ৪ নারীসহ অন্তত আরো ৫ জন আহত হয়। তাদেরকে উদ্ধার করে প্রথমে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে আশংকাজনক অবস্থায় পলাশ সরদার (১৭), অলিল সরদার (৪০) ও আজিজুল হাওলাদারের ছেলে তাজেল হাওলাদার (১৮) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার দুপুরে আড়াইটার দিকে পলাশ সরদারের মৃত্যু হয়। এদিকে নিহতদের বাড়িঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে হত্যাকারীরা।
নিহত সাইফুলের স্ত্রী জানান, আমার স্বামী খোয়াজপুর-টেকেরহাটের হাটবাজারের ইজারাদার। আমাদের আরো একটা মাস সময় ছিল। কিন্তু ওরা (হোসেন সরদার) বলতেছে যে ওরাই হাট খাবে। আমরা যাইও নাই হাটে খাজনা উঠাইতে। সরকারি লোক খাজনা উঠাইছে। এরপরও কি জন্য বুঝলাম না সব লোক এক হইয়া এইভাবে কোপাইয়া হত্যা করলো। এই হাটের ইজারা আমার স্বামী নিতে চায় নাই। জয়নাল মোল্লা চেয়ারম্যান ছিল তখন সে-ই সাইদ্দা আমার স্বামীকে দিছিল। সে (জয়নাল মোল্লা) ছিল নাসিম গ্রুপ।
বিএনপি নেতা শাজাহান খানের সঙ্গে সাইফুলের কোন দ্বন্দ্ব ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনার সাথে বন্ধুর সম্পর্ক ছিল। উনি আমাদের বাড়িতে প্রায়ই যাইতো, খাওয়া দাওয়া করতো। কিন্তু ভিতরে ভিতরে মানুষের কথা শুইনা কিছু করছে কিনা বলতে পারি না।
মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোকছেদুর রহমান জানান, এ ঘটনায় নিহত সাইফুলের মা সুফিয়া বেগম বাদি হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ পর্যন্ত ৩ জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ওই এলাকায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে।
Leave a Reply