মাদারীপুর প্রতিনিধিঃ
মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার আব্দুস সালামকে(৫০) মারধরকারীরা ছাত্রলীগের কেউ নয় বলে জানিয়েছে জেলা ছাত্রলীগ।
জেলা ছাত্রলীগ জানায়,’উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার আব্দুস সালামকে পিটিয়ে পুকুরে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্তরা ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত। তারা ছাত্রলীগের কেউ নয় বলে মন্তব্য করেছেন জেলা ছাত্রলীগ। যারা খন্দকার আব্দুস সালামের ওপর হামলা করেছেন তাঁরা সন্ত্রাসী।’
অন্যদিকে অভিযুক্তরা বলছেন, ‘তারা বহিষ্কৃত নন, ছাত্রলীগের একাংশের নেতা-কর্মী তারা।’
এদিকে রাজৈর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার আব্দুস সালামকে পিটিয়ে পুকুরে ফেলে দেবার ঘটনায় এলাকায় বিরাজ করছে উত্তেজনা। বুধবার(৩ মে) দুপুরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন তার অনুসারিরা। দোষীদের শাস্তির দাবিতে স্লোগান দেন বিক্ষুব্ধরা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
জানা গেছে, মাদারীপুরে ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ রয়েছে। একটি পক্ষ কেন্দ্রীয় কমিটির অনুকূলে থাকলেও অন্য পক্ষটি স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়া। সদর ও রাজৈর উপজেলায়ও ছাত্রলীগের দুটি কমিটি রয়েছে। জেলা ছাত্রলীগের অনুমোদিত রাজৈর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হাসান ও সাধারণ সম্পাদক সবুজ আকন। পাল্টা কমিটির সভাপতি হাসিবুল হাসান পিয়াল ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুর হক।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজৈর উপজেলা পরিষদের ভিতরে আওমালী লীগ নেতা খন্দকার আব্দুস সালাম পিটিয়ে আহত করে পুকুরে ফেলে দেন উপজেলা ছাত্রলীগের একাংশের সভাপতি হাসিবুল হাসান ও তার নেতাকর্মীরা। এ ঘটনার পর উপজেলায় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
মাদারীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বায়েজিদ হাওলাদার জানান, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে অবাঞ্চিত মন্তব্য ও দলীয় কর্মকাণ্ড বিরোধী আচরণ করায় আরো আগেই হাসিবুল হাসান পিয়ালকে জেলা কমিটির সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পিয়াল ছাড়াও তার সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যারা আওয়ামী লীগ নেতার ওপর হামলা করেছেন তারা ছাত্রলীগের কেউ নয়, পিয়াল বর্তমানে বহিষ্কৃত ছাত্রনেতা। তার সঙ্গে ছাত্রলীগের কোন সম্পর্ক নেই। তার ভাইও ছাত্রলীগের কেউ নয়। যদি তারা ছাত্রলীগের পরিচয় দেয়, তাহলে তা সম্পূর্ণ মিথ্যে। রাজৈর উপজেলার ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হাসান ও সাধারণ সম্পাদক সবুজ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আব্দুস সালাম রাজৈর উপজেলার আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা। তার সঙ্গে যা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃজনক ঘটনা। আমরা এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। এ বিষয় জেলা আওয়ামী লীগ ও উপজেলা আওয়ামী লীগ যে কর্মসূচি ঘোষণা করবে ছাত্রলীগ তার সঙ্গে একাত্রতা ঘোষণা করবে।’
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হাসান অনিক বলেন, ‘ছাত্রলীগের কমিটিতে না থেকেও যারা নামের আগে ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে অন্যায় অপকর্ম করবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।’
এদিকে রাজৈর উপজেলা ছাত্রলীগের একাংশের সভাপতি হাসিবুল হাসান মুঠোফোনে বলেন, ‘ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলা ছাত্রলীগের আমাকে বহিষ্কার করার এখতিয়ার নেই। একমাত্র কেন্দ্রীয় কমিটি বহিষ্কার করতে পারেন। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য আমাকে নিয়ে এ ধরণের কথা বলে যাচ্ছে। তারা আমার নেতৃত্বকে ভয় পান, প্রতিহিংসার জন্য আমাকে অব্যাহতি দিয়েছেন বলে দাবি করছেন।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খন্দকার আব্দুস সালামকে পিটানো ও লাঞ্ছনার প্রতিবাদে ঢাকা বরিশাল মহাসড়কের রাজৈর উপজেলার কালিবাড়ি এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আওয়ামী লীগ ও খন্দকার আব্দুস সালামের অনুসারিরা। এ সময় বিক্ষুদ্ধরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাজৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক অংশের যুগ্ম আহবায়ক ফরিদা হাসান পলবী ও তার ছেলেদের বিচারের দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে পুলিশ।
রাজৈর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘হামলার ঘটনায় এখনো থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ পেলেই মামলা নেওয়া হবে। অভিযোগ না দিয়েই বিক্ষুব্ধরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে অবরোধকারীদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠানো হয়।’
উল্লেখ্য, পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মূদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে খন্দকার আব্দুস সালাম তাঁর ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি নিয়ে জমি রেজিস্ট্রেশনের জন্য উপজেলা সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে যান। সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের প্রবেশ করতেই তাঁর মোটরসাইকেলটি গতিরোধ করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসিবুল হাসান পিয়াল। পরে পিয়ালের ভাই আশিকুর রহমান পাভেলসহ ১০ থেকে ১২ জন মিলে খন্দকার আব্দুস সালাম বেদম মারধর করেন। একপর্যায় তার হাত-পা ধরে উপজেলা চত্বরের পুকুরে ফেলে দেন। এ সময় তাঁর ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও পুকুরে ফেলে দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। স্থানীয় লোকজন আহত আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার আব্দুস সালামকে উদ্ধার করে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে তার অবস্থা অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য আব্দুস সালামকে মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
Leave a Reply