কথায় আছে ‘সাবধানের মার নেই’। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। গত বৃহস্পতিবার রোগী শনাক্ত আবার দুই হাজার ছাড়িয়েছে। আগে তরুণ অথবা শিশুদের করোনা আক্রান্ত হতে খুব একটা দেখা যায়নি। এবার আক্রান্তের তালিকায় কেউ ছাড় পাচ্ছে না। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই আছেন। শনাক্তের হার দীর্ঘদিন পর ১০ শতাংশের ওপরে উঠেছে। কিছুদিন আগেও যা ছিল ৪ শতাংশেরও নিচে। এখন পর্যন্ত চলতি বছরে ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্তের হার সর্বোচ্চ হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। এদিন রোগী শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ১৮৭ জন। এর আগে এক দিনে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে একবার, গত বছরের ৮ ডিসেম্বর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, ওই দিনে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল ২ হাজার ২০২ জন। গত বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টায় মোট ২০ হাজার ৯২৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার সংখ্যা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ছিল ১০ দশমিক ৪৫ শতাংশ। গত ১০০ দিনের মধ্যে এটি এক দিনে পরীক্ষার বিপরীতে সর্বোচ্চ শনাক্তের হার। এর আগে এক দিনে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্তের হার ছিল গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর। সেদিন এই হার ছিল ১০ দশমিক ৬৯ শতাংশ। সুতরাং বাস্তবতার নিরিখে খুব সহজেই বলা যায়- করোনা প্রতিরোধে আমরা ভালো অবস্থানে নেই। যেকোনো সময়ে আরো খারাপের দিকে যেতে পারে।
প্রথম দিকে বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়াকালীনও এ দেশের মানুষদের মাঝে তেমন একটা উৎকণ্ঠা পরিলক্ষিত হয়নি। মানুষের যাপিত জীবনে ছিল ডোন্ট কেয়ার ভাব। তবে কিছুদিন পর মানুষের বোধদয় ঘটে। সাবধান হওয়ার চেষ্টা করে। একই সঙ্গে সরকারি উদ্যোগও বিশেষভাবে সহায়কের ভূমিকা পালন করে করোনা প্রতিরোধে। যেকোনো কারণেই হোক আমরা বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়া থেকে রক্ষা পেয়েছি। অনেকটা সরেও গিয়েছিল করোনাতাণ্ডব। কিন্তু এবার যেন কিছুটা হলেও অন্যরকম মনে হচ্ছে। অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে সংক্রমণ।
এর কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা প্রকোপ কমে আসতেই শুরু হয় স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করার প্রবণতা। এখন যে হারে করোনার প্রকোপ বাড়ছে সেভাবে বাড়ছে না স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা। আর এর মধ্যেই ধেয়ে আসছে বৈশ্বিক এ মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ। ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে করোনার আগ্রাসী প্রবণতা। তবুও যেন আমরা বোধের দরজায় তালা মেরে বসে আছি। এ যেন আমাদের বোকার স্বর্গে শান্তিতে বসবাসের মতো। এই উপেক্ষা যেকোনো সময় ডেকে আনতে পারে মহা বিপর্যয়।
আমরা খুব ভালো করেই জানি, এখন পর্যন্ত করোনা সারিয়ে তোলার জন্য বাজারে কোনো ওষুধ আসেনি। টিকা এসেছে। তবে তা এখনো ঘরে ঘরে পৌঁছাতে পারেনি। কিন্তু এ কথাও সত্য যে, টিকাই একমাত্র সমাধান নয়। প্রতিরোধের জন্য একটিই পথ খোলা আছে। আর সে পথটি হলো স্বাস্থ্যবিধিকে কঠিনভাবে অনুসরণ করা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের সচেতনতায় যে ঢিলেমি ভাব, যে অবহেলা ও অসাবধানতা—এগুলো দেশবাসীর জন্য ডেকে আনবে ভয়ংকর সর্বনাশ। চলতি সপ্তাহে ঢাকার বিভিন্ন সড়ক, হাসপাতাল, শপিং মল, ও প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের যে চিত্র দেখা গেছে তা সংক্রমণের অনুকূলেই। এখান থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসাটাই জরুরি। আর বেরিয়ে আসার জন্য সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে দেশের প্রতিটি নাগরিককেই।
মনে রাখা দরকার, জীবনটা আমার। কারো ওপর ভরসা না করে নিজেকে রক্ষার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। আর প্রত্যেকেই যদি এ দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসি তাহলে, করোনা প্রতিরোধে আমরা সফল হবই
Leave a Reply