মাদারীপুর জেলার শিবচরে একটি ইউনিয়ন বিএনপি সুধী সমাবেশ ও মতবিনিময় সভায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ছাত্র জনতা হত্যার একাধিক মামলার আসামী ও আওয়ামীলীগের এক চেয়ারম্যানকে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে।এছাড়াও আরো কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীকে বিএনপিতে যোগদান করানো হয়েছে। এই নিয়ে জেলাজুড়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে।
সোমবার(৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকায় এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, সোমবার দুপুরে শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের বাদশা বেপারীর বাড়িতে বিএনপির একাংশের এক কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বিএনপি নেতা কামাল জামান নুরুদ্দীন মোল্লা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। নুরুদ্দিন মোল্লাকে স্বাগত জানাতে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা মোহসেন উদ্দিন সোহেল বেপারীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। পরে সভার মঞ্চেও বিএনপি নেতা কর্মিদের সাথে কথা বলতে দেখা গেছে ওই চেয়ারম্যানকে। এছাড়াও একই অনুষ্ঠানে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সজীব হাওলাদারকে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগদান করারও খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও একই সঙ্গে এলাকার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের আরো বেশ কিছু নেতারও বিএনপিতে যোগদানের খবর পাওয়া গেছে। এতে করে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মাঝে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিবচর উপজেলার সন্যাসীরচর এলাকার হৃদয় হোসেন শিহাব হত্যা মামলার এজাহারভূক্ত ১৮ নং ও শিবচরের ভান্ডারীকান্দি ইউনিয়নের নাইমুর রহমান হত্যা মামলার ৩৭ নং আসামি আওয়ামীলীগ নেতা ও কাঠালবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহসেন উদ্দিন সোহেল বেপারী।অন্যদিকে সজীব হাওলাদার হৃদয় হোসেন শিহাব হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৭৪ নং আসামী।
শেখ নূর উদ্দীন নামে এক ছাত্র দল নেতা বলেন,
শিবচর উপজেলা আওয়ামিলীগের সাবেক সভাপতি লতিফ মোল্লার আপন ছোট ভাই কামাল জামান নূরুদ্দীন মোল্লা একসময় আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলো। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চেয়েও পায় নি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়। এরপরে থেকে নিজেকে বিএনপি নেতা বলে পরিচয় দিতে থাকে। ২০১৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত শিবচরে তার কোনো কার্যক্রম ছিলো না। ৫ আগষ্ট এর পরে তিনি হঠাৎ করে প্রকাশ্যে এসে আওয়ামীলীগ নেতাদের বিএনপিতে পুনর্বাসন করে রাজনীতিতে ফিরতে চেষ্টা করছে। তিনি এখন আওয়ামিলীগ নেতাদের অভয়ারণ্যে পরিনত হয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যা মামলার ২ জন আসামী ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল বেপারি ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি সজিব হাওলাদারকে আজ দলে ভিড়িয়ে বিএনপি কর্মীসমাবেশ করছেন। তাছাড়াও নুরুদ্দীন মোল্লার বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আড়িয়াল খাঁ সেতু উদ্বোধন করতে আসার সময়ে ফেরিঘাটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফেরির পল্টুন কেটে দেওয়ার সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। তার মতো একজন আওয়ামিলীগের গুপ্তচরের জন্য শিবচরে বিএনপির উপরে আস্থা হারাচ্ছেন সাধারণ জনগণ। অতিসত্বর হাইকমান্ডকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আহবান জানাই আমরা।
যোগদান বা সমাবেশে উপস্থিত থাকার বিষয় জানতে সোহেল বেপারীর মুঠোফোনে একাধিক বার ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন খলিফা বলেন, আওয়ামী লীগের যারা ত্যাগী,আস্থাশীল এমন নেতাদের সাথে সমন্বয় না করে কিছু দালাল চক্রের সাথে সমন্বয় করে তাদের দলে স্থান দেওয়া হয়েছে। তারা দলের সকল সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন। তারা এসেছিল ব্যবসা করতে ব্যবসা শেষ এখন আবার চলে গেছে। আমাদের দলের নেতা জননেতা নুর ই আলম চৌধুরী কোন সাংগঠনিক সম্পাদক বা দলের কারো সাথে আলাপ আলোচনা না করে তাদের দলে এনছিল।এখন তারা সুযোগ পেছে চলে গেছে। কোন ত্যাগী নেতা দল ছাড়েনি।ছেড়েছেন সুযোগসন্ধানীরা।
শিবচর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান বলেন,দেশে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আমাদের ছাত্র জনতা মারা গেছে, তাদের হত্যা করা হয়েছে। সেই আসামীদের সাথে বিএনপি নামধারী আওয়ামী লীগের পেতাত্বারা অপতৎপরতার মাধ্যমে আওয়ামীলীগকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে। আমরা শিবচর উপজেলা বিএনপির এর তীব্র নিন্দা জানাই।যারা এ কাজগুলো করছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা শিবচর উপজেলা বিএনপির ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।
মাদারিপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী লাবলু বলেন,আমাদের হাইকমান্ডের নির্দেশ মোতাবেক আওয়ামী লীগের কারো দলে যোগদান বা দলে নিয়ে একই মঞ্চে বক্তব্য দেওয়া নিষেধ। তুবও এক শ্রেনীর লোক এগুলো কেন করে আমাদের বুঝে আসে না।আমরা জেলা ও উপজেলা বিএনপির পক্ষে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
মাদারীপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক এ্যাড.জাফর আলী মিয়া বলেন, এই বিষয়ে আমরা অবগত নই।এই মূহুর্তে কোন দল থেকে বিএনপিতে যোগদানের কোন সুযোগ নেই।কেউ যোগদান করতে হলে জেলা বিএনপি জানবে।আমরা এ বিষয়ে কিছুই জানি না।যদি কেউ এধরনের কাজ করে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply