শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধিঃ
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেনীর ২০ থেকে ২২ জন শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে জুতাপেটা করার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (৯ মে) দুপুর তিনটার দিকে উপজেলার বন্দরখোলা ইউনিয়নের রিয়াজউদ্দিন মাদবর কান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে গিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সাথে কথাবলে জানা যায়, বিদ্যালয় ছুটি হওয়ার কিছুক্ষন পূর্বে শিক্ষার্থীরা উপরতলা থেকে নিচে নামেন। তখন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে তার পায়ে থাকা জুতা খুলে নিক্ষেপ করেন। ভয় পেয়ে ছাত্ররা দৌড়ে ক্লাস রুমে প্রবেশ করারপর শিক্ষক হাফিজুর রহমান ক্লাস রুমে গিয়ে ৫ম শ্রেনীর ছাত্র জাহিদ, ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্র আরিফ, ইয়াছিন, উসমান গনি, এনায়েত সহ প্রায় ২০ জন ছাত্রকে পর্যাক্রমে ডেকে ডেকে তার পায়ে থাকা জুতা খুলে পিটুনি দেয়।
এই ঘটনায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আতংক তৈরি হয়েছে। এবং এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থী জাহিদ বলেন, “আমাদের হেড স্যার হাফিজুর রহমান আজ দুপুরের আমিসহ আমাদের ক্লাসের প্রায় বিশ জনকে জুতাদিয়ে পিটাইছে। আমরা নিচে নেমেছি আর হেড স্যার জুতা ফিক্কা লাগাইছে। পরে ক্লাসে গেছি, তারপর আমাকে দুইটা বারি দিছে, আর সবাইকে পিঠে একটা করে বারি দিছে জুতা দিয়ে।”
বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেনীর শিক্ষার্থী আল আমিন বলেন,’ আমরা ছুটির জন্য নিচে গেছিলাম, তারপর ক্লাসে গেছি, তারপর দেখি হেড স্যার হাফিজুর রহমান জুতা দিয়ে পিটাইতেছে ওদের।’
বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেনীর এক শিক্ষার্থীর ভাই সাইদুর রহমান বলেন,’ আজ বেলা আনুমানিক তিনটার সময় আমার ছোট ভাই এই বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেনীর ছাত্র আমার নিকট এসে কান্নাকাটি করে জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজ স্যার ওদেরকে জুতাদিয়ে পিটাইছে সবাইকে। পরে সবার নিকট থেকে জানতে পারি ছুটির কিছুক্ষণ আগে ওরা নিচে নামলে হেড স্যার জুতা নিক্ষেপ করে, পরে ওরা ভয় পেয়ে ক্লাসরুমে গেলে ওদের সবাইকে জুতাদিয়ে পিটাইছে।’
এই ঘটনায় বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম গিয়াস মাতুব্বরকে ফোন দিলে তিনি বলেন, ‘সাইদুর আমাকে ফোন দিয়েছে, আমি হেড মাষ্টারকে সাথে করে নিয়ে আসছি, ওনি ছুটির আগেই চলে আসছে। হেড মাষ্টার বললো একটু খারাপ লাগছে তাই চলে আসছি, ছুটি হয়নাই। তখন পৌনে ৪ টার মত বাজে। পরে আমি মাষ্টারকে ফোন করি, মাষ্টার বললো মামা এরকম পোলাপানে কেচাকেচি করছে,আমি রাগের মাথায় এই অন্যায় করছি। এখন যেভাবে হোক, এটা বিচার করেন, আমি মেনে নিবো।’
প্রধান শিক্ষক তার ছাত্রদের জুতা দিয়ে পিটাতে পারেন কি না প্রশ্নের উত্তরে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বলেন, ‘সেটাতো পারে না, এখন আমরা একজায়গায় বসি, তারপর প্রয়োজনে মুচলেকা নিবো, যেনো সে আর কোনোদিন এই ধরনের কাজ করেন। যদি করে তাহলে চাকুরী থেকে অব্যহতির ব্যবস্থা করে দিবো।’ ‘এখন ঘটনা হইলো ওনি খুব ভয় পাইছে। এটারে নিয়া আর বাড়ানোর দরকার নাই।’
এই ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক মোঃ হাফিজুর রহমানকে ফোন দিয়ে জানতে চাইলে, তিনি ঘটনা অস্বীকার করেন।
শিবচর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মুন্সী রুহুল আসলাম বলেন, ‘আমাকে এলাকাসীর পক্ষ থেকে কেউ এমন অভিযোগ দেয়নাই। ঘটনাটি আমি শুনেছি সন্ধায়। একজন সাংবাদিক জানিয়েছে। একজন এটিইও কে আগামীকাল স্কুলে গিয়ে তদন্ত করার জন্য বলেছি। যদি এর সত্যতা মিলে, তাহলে অবশ্যই আমরা বিভাগীয় ব্যবস্থা নিবো।’
Editor In Chief : Md.Rafiqul Islam Raza
Sub-Editor : Abu Saleh Mussa
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply