স্টাফ করেসপন্ডেণ্ট, মাদারীপুর:
লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যার ঘটনার পর মাদারীপুরের ১৩ যুবকের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে। লিবিয়ায় হত্যার ঘটনার পর পরই লিবিয়াতে থাকা মাদারীপুরের ১৩ যুবকের খোঁজ পাচ্ছে না তাদের পরিবার। ফলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছে নিঁখোজদের পরিবার। তারা বেঁচে আছে না মারা গেছে তার সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
ওই হতাহতের ঘটনায় এদের কেউ রয়েছে কি না তারও হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। তবে হত্যাকান্ডের পর থেকেই মাদারীপুরের ১৩ যুবকের সাথে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলে তাদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে লিবিয়ায় হতাহতের ঘটনার খবর শুনে শুক্রবার(২৯ মে) বেলা ১১টার দিকে জেলার রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর এলাকার দালাল জুলহাস শেখের বাড়িতে হামলা চালায় নিঁখোজ যুবকদের পরিবার। খবর পেয়ে রাজৈর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। নিঁখোজ যুবকেরা জুলহাস শেখের মাধ্যমেই লিবিয়া যায়।
লিবিয়ায় নিঁখোজ যুবকেরা হলেন রাজৈর উপজেলার হোসেনপুরের আবদুর রহিম, বিদ্যানন্দী গ্রামের জুয়েল হাওলাদার (২২) একই গ্রামের মানিক হাওলাদার (২৮), টেকেরহাট এলাকার আসাদুল, মনির হোসেন ও আয়নাল মোল্লা, ইশিবপুর এলাকার সজীব ও শাহীন, সদর উপজেলার জাকির হোসেন, জুয়েল হোসেন, সৈয়দুল, ফিরোজ ও দুধখালীর শামীম।
নিঁখোজ এই যু্বকদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কোন খোঁজ নেই তাদের পরিবারের কাছে। ঘটনার পর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। পরিবারের লোকজন জানেও না তাদের সন্তানেরা আদৌ বেঁচে আছে কি না। অনেকে আবার হত্যাকান্ডের খবরও শোনেনি।
এদিকে নিঁখোজ যুবকদের সঠিক পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় মাদারীপুরে তাদের স্বজনদেরও খোঁজ পাওয়া সম্ভব হয় নি।
হোসেনপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নিখোঁজ জুয়েল হাওলাদারের পিতা রাজ্জাক হাওলাদার ও মা রহিমা বেগম বলেন,’আমাদের ছেলেসহ রাজৈরের বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজনকে দালাল চক্র লিবিয়া নেওয়ার কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৪/৫ লাখ টাকা চুক্তি করে নিয়ে যায় ৩/৪ মাস আগে। তারপর লিবিয়ার ত্রিপলী না নিয়ে বেনগাজী নামে এক গ্রামে আটকে রেখে নির্যাতন শুরু করে। এরপর ভয়েজ রেকর্ডে নির্যাতনের শব্দ পাঠিয়ে আরো ১০ লাখ টাকা দাবী করে। আমরা হোসেনপুর জুলহাস শেখ নামের ওই দালালের বাড়িতে গিয়ে ১০ লাখ টাকা দিয়ে আসি। মানুষের কাছে শুনতে পাচ্ছি লিবিয়ায় গুলি করে অনেক বাংলাদেশীকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের ছেলে বেঁচে আছে কি না তাও জানতে পারছি না। এখন পর্যন্ত ছেলের কোনো খোঁজ পাই নাই।’
একই গ্রামের নিখোঁজ মানিক হাওলাদারের পিতা শাহ আলম হাওলাদার বলেন, ‘আমার ছেলে মানিককে লিবিয়া নেওয়ার কথা বলে দালাল জুলহাস আমার কাছ থেকে প্রথমে ৪ লাখ টাকা নিয়েছে। পরে ছেলেকে বেনগাজী আটকে রেখে ভয়েজ রেকর্ডের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা দাবী করে। আমি আমার ছেলেকে আনতে জুলহাসের বাড়ি গিয়ে টাকা দিয়ে আসি। এখনো আমার ছেলের কোনো খোঁজ পাচ্ছি না।’
রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত জাহান জানান, লিবিয়ায় লোক নেয়া দালাল রাজৈরের জুলহাস শেখের বাড়িতে এলাকাবাসী হামলা করে এমন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা ওই বাড়িতে গেলে জুলহাস বলে আমার করোনা হয়েছে। করোনার কথা শুনে আমরা জুলহাস শেখকে মাদারীপুর সদর হসাপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি করি।’
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশীদের হত্যার কথা শুনেছি। যাদের মধ্যে মাদারীপুরের লোকজনই বেশি। মাদারীপুরের কতজন মারা গেছে এ তথ্য এখন পর্যন্ত প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয় থেকে পাইনি।
তিনি আরো জানান,’ মন্ত্রনালয়ে আমি যোগাযোগ করেছি। তারা বলেছে আমাকে মাদারীপুরের কতজন মারা গেছে সে তথ্য শীঘ্রই দিবে। লাশ দ্রুত কিভাবে দেশে আনা যায় আমি সে বিষয়েও মন্ত্রনালয়ের সাথে কথা বলেছি।’
১০.০২ঘন্টা, মে ২৯,২০২০/ইআ
Editor In Chief : Md.Rafiqul Islam Raza
Sub-Editor : Abu Saleh Mussa
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply