শিবচরনিউজ২৪ডেস্কঃ
ও রানী সালাম বারে বার, নামটি আমার জোসনা ভানু রানী,থাকি লক্ষার পাড়, এক ঘাটেতে রান্ধি বাড়ি মোরা,আরেক ঘাটে খাই, মোদের সুখের শীমা নাই”বেদের মেয়ে জোসনা সিনেমার এই জনপ্রিয় গানটি বহন করছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী বেদে সম্প্রদায়ের কথা।এই গানটিতে বেদে সম্প্রদায়ের সুখ -শান্তি ও অপরুপ সৌন্দর্যময় রুপের কথা বলা থাকলেও কিন্তু জেনে অবাক হতে পারেন, এই অপরুপ সৌন্দর্যের মাঝেও লুকিয়ে আছে এক অন্ধকার জগত। আর এই মানবেতর জীবনযাপন করা মানুষগুলোর কিছু অংশ দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে বসবাস করে আসছে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার মাদবরেরচর গ্রামে।
ঢাকা- খুলনা এক্সপ্রেসওয়ের শিবচর উপজেলার পাচ্চর বাসষ্টান্ডের সন্নিকটে নাইম ফিলিং স্টেশনের ঠিক পিছনে প্রায় ৩০ বছর ধরে বসবাস করছে এই বেদে সম্প্রদায়ের ৬০ টি পরিবার।যেখানে আছে প্রায় ২০০ মানুষ বা মাদবরেরচর ইউনিয়নের ৫০ টি স্থায়ী ভোটর।আর মানবেতর জীবন-যাপন করা এই মানুষগুলোর একটাই পরিচয়, তারা ‘বেদে’। এক সময় তারা নৌকায় বসবাস করলে বর্তমানে আধা পাকা ও টিন দিয়ে ঘর বানিয়ে বসবাস করছে অনেকে কেউ আবার কাপড় টানিয়ে পলিথিন মোড়ানো ছাদের নিচে বসবাস করছে। আগের দিনে যাদের পেশা ছিলো তাবিজ-কবজ বিক্রি করে, কখনো বা সাপের খেলা দেখাতো। তাও আবার কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে।বর্তমানে এই পল্লীর পুরুষের পেশা রাজ মিস্ত্রী ও গ্রামে গ্রামে ফেরী করে আইসক্রিম বিক্রি।মহিলারা কেউ সিঙ্গা দিয়ে বা এলাকার অন্য বাড়িতে কাজ সংসার চালাচ্ছেন।
জানাযায়, বিশ্বব্যাপী যখন করোনা ভাইরাস মহামারী আকারা ধারন করছে এছাড়া সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের ঘোষনা অনুযায়ী গত ১১ দিন ধরে শিবচরের ৪টি এলাকায় প্রায় ৭৮ হাজার মানুষ প্রশাসনের বিশেষ নজরদারিতে রয়েছে । শিবচর পৌর বাজারসহ ঝুঁকিপূর্ণ ২টি ওয়ার্ড ও ২টি ইউনিয়নের ২ গ্রামসহ পুরো উপজেলার প্রতিটি গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এসব এলাকায় পুলিশ পাহাড়ায় রেখে মানুষের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হয়েছে।
এদিকে এসব এলাকাসহ শিবচর উপজেলার পুরো এলাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান ব্যতীত সব দোকান টানা ১১ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে শিবচরের সকল এলাকায় কমছে লোকজনের সমাগম।ঠিক তখনি এই বেদে পল্লীতে খোজ খবর নিয়ে জানা যায় তাদের মানবেতর জীবন যাপনের কথা।নিজ চোখে না দেখলে আমরা অনেকেই হয়তো বিস্ময় প্রকাশ করব না।
মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) সকালে সরেজমিনে তাদের খোজ খবর নিয়ে জানা যায়,আজ ১১ দিন ধরে তাদের কাজ কর্ম বন্ধ।তার জানান,যেহেতু শিবচর উপজেলাটি বাংলাদেশের মধ্য করোনা ভাইরাসের কারনে মারাত্মত ঝুঁকিতে রয়েছে।তাই প্রশাসনের আদেশ অনুযায়ী তার ঘর থেকে বেড় হচ্ছেন না।সকলের কাজ কর্ম বন্ধ থাকায় খুব মানবেতর জীবন যাপন করছেন অনেকেই।
বেদে সম্প্রদায়ের সর্দার আনোয়ার হোসেন জানান, আমাদের কেউ ইসক্রিম বিক্রি করতো,কেউবা আবার রাজমিস্ত্রির কাজ করতো।কয়েকদিন হলো কেউ বের হতে পারেনা।কেউ আজ পর্যন্ত আমাদের খবর নিতে আসে নি।শুনতেছি ওই এলাকায় চাল ডাল দিচ্ছে।কিন্তু আমাগো এখানে কেউ আসে না”
এ বিষয়ে শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান শিবচরনিউজ২৪.কমকে বলেন, শিবচরে অসহায়,দুস্থ, প্রতিবন্ধী, বেদে সম্প্রদায় সকলেই আমাদের খাদ্য সহায়তার অংশ।ইতমধ্য উপজেলা প্রশাসন মাঠ পর্যায়ে অসহায় গরিব লোকদের সহায়তা দেওয়া শুরু করেছে।খুব অল্প সময়ের মধ্য আমরা তাদের খাদ্য সহায়তা প্রদান করবো।এছাড়া আমরা নিয়মিত তাদের খোজ খবর নিচ্ছি।
Leave a Reply