মাদারীপুর প্রতিনিধি
ছোট বেলা থেকে মায়ের হাতেই ভাত খেতেন।বয়স ২২ বছর হলেও এখনো মায়ের হাতেই ভাত খান।কলেজ আর বাসা ছাড়া কখনো কোথাও একা যেতেন না।সেদিন সকালে আমি ভাত মাখিয়ে ওরে খাওয়াবো বলে রেডি হই।হঠাৎ ও বলে মা মোবাইলে এমভি ভরে নিয়ে আসি তার পরে এসে ভাত খাবো ।পাঁচ মিনিটের মধ্যেই এসে পড়বো।তুমি টেনশন নিওনা।আমি কোথাও যাবোনা।সকাল সাড়ে নয়টার দিকে সে বের হয়েছে পরে কি হয়েছে আমি যানিনা এমন কথাগুলো বলছেন বৃহস্পতিবার(১৮জুলাই) কোটা আন্দোলনে নিহত মাদারীপুরের দীপ্ত দের মা মনিকা দে।
নিহত দীপ্ত দে মাদারীপুর শহরের আমিরাবাদ এলাকার স্বপন কুমার দের বড় ছেলে।এছাড়াও সে মাদারীপুর সরকারি কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সম্মান ২য় বর্ষের ছাত্র। মাদারীপুরে ভাড়া বাসায় থাকে। তাদের স্থায়ী ঠিকানা ভোলা জেলার বোরহান উদ্দিন থানার ছোট মানিকা এলাকায়। স্বপন দে মাদারীপুর সদর উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে গত ২ বছর আগে অবসরে যান।দুই ছেলের লেখাপড়া করার কারনে মাদারীপুরেই থাকেন।পরিবারসহ স্বপন দে ভোলায় ফিরে যেতে চাইলেও দীপ্তর কারনে মাদারীপুর ছাড়েন নি।দীপ্ত মাদারীপুরকে অনেক ভালোবাসেন বলেই মাদারীপুর ছেড়ে যায়নি।তার ছোট ভাই এবার একই কলেজ থেকে এইচ এসসি পরিক্ষা দিচ্ছেন।
এসময় মনিকা দে অশ্রু কন্ঠে আরো বলেন,সেই ভাত আর বাবায় খেতে পারলো না।পরে সাড়ে ১২ টার দিকে আমরা মোবাইল দেখেতে পাই দীপ্ত আর নেই।তখন ওর বন্ধুরা বাসায় এসেছে। আমার মনে কামড় দেয়নাই যে আমার ছেলে নেই।তখন আমি মনে করেছি ও কোথাও অসুস্থ হইছে। কিন্তু এভাবে চলে যাবে আমরা ভাতে পারিনি।
এদিকে গত ১০ দিন ধরেই মাদারীপুরে কোটা আন্দোলনে নিহত দীপ্ত দে এর পরিবারের মাঝে চলছে শোকের মাতন। দীর্ঘ ১০ দিন পার হয়ে গেলেও কিছুইতেই থামছে না কান্না।দীপ্তর অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না পরিবার ও স্বজনরা। এখনো ছেলের ছবি বুকে ধরে রেখেছে পরিবার। ছেলে হারানো শোক কোনোমতে কেটে উঠতে পারেনি তারা।এদিকে ছেলে হারানোর বিচার কার কাছে চাইবে জানে না তার পরিবার।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়,কোটা বাতিলের দাবিতে বৃহস্পতিবার(১৮জুলাই) সকাল ১০টার দিকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে মাদারীপুর শহরের ডিসিব্রিজ এলাকায় জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা। পরে জেলার পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয় তারা। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে আন্দোলনকারীদের সাথে সংঘর্ষ হয়।এদিকে ছাত্রলীগ ও পুলিশের ধাওয়া খেয়ে শহরের শকুনী লেকের পানিতে ডুবে দীপ্ত দে মারা যান। এসময় পুলিশ, ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীর বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে যাওয়া হয় দীপ্ত দের আমিরাবাদের বাসায়।সেখানে গিয়ে কথা হয় কয়েকজন প্রতিবেশীদের সাথে। তারা জানান,
দীপ্তর মতো ভালো ছেলে হয় না।সে এখন অনার্সে পড়ে তারপরও তার মা তারে খাবার খাইয়ে দেয়।বিনা প্রয়োজনে কখনো বাহিরে যেতো না।গেলে বাবা বা মায়ের সাথে যেতো।অনেক কষ্ট নিয়ে ওর বাবা মা এখানে বাসা ছেড়ে বর্তমানে শহরের শহীদ হারুন সড়কের তার মামার বাসায় উঠেছেন।এখন থেকে নাকি তারা ওখানেই থাকবেন।
পরে সেখান থেকে যাওয়া হয় দীপ্তর মামা বিপ্লব কুমার দের বাসায়।সেখানে পরিবার ও স্বজনেরা মিলে দীপ্তর আত্মার শান্তির জন্য পুজো দিচ্ছেন।ছেলে হারানো ব্যথা এখনো ভুলতে পারছে না দীপ্তর পরিবার ও এলাকাবাসী।
দীপ্তর বাবা বলেন,সকালে মোবাইল এমভি ভরতে গেলো।বলে গেলে এক্ষুনি আসছি।আর এলোনা
কোন সময় এলাকার কোন মারামারি দেখলে ও সেখানে যেতো না।ছোট ভাইকেও সেদিন বলে কোথাও আন্দোলনে বের হবিনা।কিন্তুু নিজেই আর ফিরে এলোনা।ওতো কোন আন্দোলন যায় নি! কেন এমন হলো।কার কাছে কমু,কার কাছে বিচার দিমু।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মনিরুজ্জামান ফকির বলেন, ‘লেক থেকে এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে।
Leave a Reply