করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করতে যাচ্ছে। বুধবার দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা আয়োজন করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত জাতীয় আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা স্থগিত করেছে। এর আগে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের অধীন কেন্দ্র সচিবদের সভা স্থগিত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে পরস্থিতি পর্যাবেক্ষণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আগামী সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা স্থগিত করার ঘোষণা দেবে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আজকের (বুধবার) বৈঠকটি স্থগিত করা হলেও তা পরবর্তীতে হবে। এর সঙ্গে পরীক্ষা পেছানোর কোনো সর্ম্পক নেই। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নেব। আন্তঃশিক্ষাবোর্ড ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক আজকালের খবরকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক স্থগিত হলেও পরীক্ষা পেছানোর ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আরও সাত-আট দিন না যাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি এ রকম থাকলে পরীক্ষা পেছানো হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ রকম থাকলেও তখন সিদ্ধান্ত নেব।
সূত্র জানিয়েছে, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে তা কেন্দ্রে পৌঁছানো ও কেন্দ্র প্রস্তুতসহ সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা শেষ করা পর্যন্ত কয়েক লাখ কর্মকর্তা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জড়িত। পরীক্ষা আয়োজন নিয়ে সভা করতে হয়। একে অপরের সংস্পর্শে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরীক্ষা স্থগিত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।
সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির (সকশিস) সভাপতি জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষক ও পরীক্ষার্থীসহ সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এই পরিস্থিতি পরীক্ষা স্থগিত করা উচিত।’ অভিভাবকরা বলেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা স্কুল-কলেজের পাশাপাশি কোচিং ও প্রাইভেট নির্ভর। সহপাঠীদের সঙ্গেও শেয়ারিং করে পড়াশোনা করে। সরকার শিক্ষার্থীদের বাসায় থাকতে বলেছে। এখন তারা কীভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাবে- প্রশ্ন রাখেন অভিভাবকরা। শেষ ১৫ দিন একজন পরীক্ষার্থীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় শর্ট সাজেশন্স তৈরি, বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ারিং করে বিশেষ প্রস্তুতি নেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণার পর পরীক্ষার্থীরা বাসাতেই অবস্থান করছেন। তারা শিক্ষকদের কাছেও যেতে পারছেন না। এতে তাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি বিঘ্নিত হচ্ছে। বুধবার আজকালের খবরে ‘এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ, পেছানোর দাবি অভিভাবকদের’ শীর্ষক শিরোনামে সংবাদ প্রকাশেল পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা স্থগিত করেছে। গত সোমবার এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছিলেন, ‘আমরা এখনই এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। কাছাকাছি সময়ে গিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও শিক্ষার্থীদের নিরাপদ দূরত্বে রাখতে এক বেঞ্চ পর পর সিট প্ল্যান করা হবে।’
পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দাবি, একটি ক্লাসে ৩০-৪০ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করানো হয়। আর পরীক্ষার হলে অন্তত ৭০ থেকে ৮০ জনকে এক রুমে বসানো হয়। পরীক্ষার কক্ষে শিক্ষক, প্রশাসনের লোকজন দায়িত্ব পালন করেন। পরীক্ষার কেন্দ্রের বাইরে পুলিশ প্রশাসনসহ সাধারণ মানুষও ভিড় করনে। পরীক্ষার্থীদের নিজ কলেজ থেকে দূরের কলেজ পরীক্ষার কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়। এসব কারণে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে পরীক্ষা স্থগিত করার দাবি জানিয়েছে তারা। সূত্র জানিয়েছে, পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও কর্মকর্তারাও আতঙ্কে আছেন। সরকার সভা সমাবেশ এড়িয়ে চলার সতর্কতা জারি করায় এইচএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে গত সোমবার ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের অধীন সব পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিবদের সভা ডাকা হলেও তা স্থগিত করা হয়।
Editor In Chief : Md.Rafiqul Islam Raza
Sub-Editor : Abu Saleh Mussa
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply