শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধিঃ
মাদারীপুরের শিবচরে সদ্য প্রকাশিত এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে ভালো ফল করায় খুশি হয়েছেন পরিবারসহ স্কুলের শিক্ষক ও প্রতিবেশীরা। তবে অর্থাভাবে সেই আনন্দ এখন বিষাদে পরিণত হচ্ছে কবিতা আক্তারের।
কবিতা এ বছর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ শিবচর নন্দকুমার মডেল ইনস্টিটিউটশনের ভোকেশনাল শাখা থেকে জিপিএ-৫ (গোল্ডেন) অর্জন করেন।সে উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের চর কাচিকাটা গ্রামের কুদ্দুস সরদারের মেয়ে।
তবে জিপিএ-৫ পেয়েও পরিবারের আর্থিক অভাব-অনটনের কারণে ভালো কলেজে ভর্তি অনিশ্চয়তা রয়েছে কবিতার।আগামী দিনের উচ্চশিক্ষার খরচের কথা চিন্তা করে কবিতা ও তার বাবা- মায়ের চোখেমুখে এখন হতাশার ছাপ।
মেধাবী ছাত্রী কবিতা তাদের বাবা মায়ের চার সন্তারের মধ্য বড়।তার বাবা কুদ্দুস সরদার পেশায় একজন ভ্যান চালক।মা শেফালী বেগম অন্যর বাড়িতে কাজ করে তাদের সংসার চালান।
এদিকে তার বাবা কয়েক বছর ধরে যক্ষাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়েও ভ্যান চালিয়ে আর মা পাশ্ববর্তী খান বাড়িতে কাজ করে কোনো মতে সংসার চালান। অভাবের এ সংসারে কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে কবিতা।ইচ্ছে পড়াশোনা করে একজন সেবিকা হওয়ার।
কবিতা আক্তার জানায়, স্কুলে নিয়মিত যেতাম।স্যারদের নির্দেশনা মেনে চলতাম।অনেক সময় না খেয়েও স্কুলে গিয়েছি।আব্বা ভ্যান চালাতে যেত,মা অন্যর বাড়িতে কাজে যেত তখন বাড়িতে বসে পড়তাম।আমি ঠিকমতো স্কুলের ও প্রাইভেটের বেতন দিতে পারতাম না।এ বিষয়ে আমার শিক্ষকদের আন্তরিকতার ঘাটতি ছিলোনা। এখন ভালো কোনো কলেজে ভর্তি ও পড়ালেখায় প্রয়োজনীয় টাকা তার দিনমজুর পিতা মাতার পক্ষে যোগান দেওয়া সম্ভব নয়। এজন্য এক ধরনের অনিশ্চয়তা নিয়ে দিন পার করছি।।আমি সকলের সহযোগিতা চাই।
কবিতার মা শেফালি বেগম সারাক্ষণ নিউজকে বলেন,আমরা গরিব মানুষ।যখন হুনছি মেয়েটি গোল্ডেন পাইছে আর কান্না থামাতে পারিনাই।ওর স্কুলের বোরহান স্যার,লিটু স্যারসহ সবাই মেয়েটিকে সাহায্য করত।একটা জামা কিনে দিতে পারি নাই আমার কবিতারে সে চার বছর একটা জামা গায় দিয়ে স্কুলে গেছে। এখন আপনারা সবাই এগিয়ে আসলে আমরা ওকে পড়াতে পারব।”
কবিতার বাবা কুদ্দুস সরদার জানান, অভাব-অনাটনের মধ্যেও মেয়ে ভালো ফলাফল করেছে।এজন্য আমি তার স্কুলের শিক্ষক ও আমার প্রতিবেশিদের প্রতি কৃতজ্ঞ।কবিতা আরও পড়তে চায়। ছয়জনের সংসারে আমার এই কাজ করে যে আয় তা দিয়ে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। কিন্তু মেয়ের কলেজে পড়ালেখার খরচ কোথায় পাব। কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি।
কবিতার প্রতিবেশি চাচাতো ভাই গোলাম গাউছ জানান,কবিতা ভালো ছাত্রী হওয়ার কারণে পড়াশোনার ব্যাপারে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনেক সহযোগিতা করেছে। তাই সে এসএসসিতে ভালো ফলাফলও করেছে। কিন্তু এখন তার ভালো কলেজে ভর্তি করাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। সেই টাকা জোগাড় করা তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। আর টাকা না হলে লামিয়া কলেজে ভর্তি হবে কীভাবে?আমরা চাই সমাজের যারা বৃত্তবান আছেন সবাই তার পাশে দাড়াঁবে।
শিবচর নন্দকুমার মডেল ইনষ্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক মোঃ হারুন অর রশিদ সারাক্ষণ নিউজকে জানান, কবিতা আক্তার একজন মেধাবী ছাত্রী।সে অসহায় বাবা মায়ের সন্তান।আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছি তার পড়াশোনা বিঘ্ন না ঘটে।আল্লাহর রহমতে সে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে এ জন্য আমরা গর্বিত।আমি আশা করবো সমাজে যারা বৃত্তবান আছে,রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ আছে তারা কবিতার পাশে থাকবে।তাকে সাহায্য করবে যাতে সে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পৌছাতে পারে।