রফিকুল ইসলাম রাজা,শিবচর থেকেঃ
“প্রতিভা কোনো সীমাবদ্ধ সিদ্ধিতে সন্তুষ্ট থাকে না, অসন্তোষই তার জয়যাত্রা পথের সারথি’ বলেছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কর্তব্য অবহেলা, জনহয়রানি ও ঘুষ-দুর্নীতিসহ অভিযোগের শেষ নেই জনগণের। তবে এর ব্যতিক্রম কর্মোদ্যম, সৎ ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাও রয়েছে। যারা লোভ লালসার উর্ধ্বে উঠে নিজ প্রতিষ্ঠানকে গড়ে তোলেন জনবান্ধব ও বিপদগ্রস্ত মানুষের আশ্রয়স্থল। এটাই সত্য একজন কর্মঠ দায়িত্বশীল অফিসারই পারেন শ্রম ও সুদক্ষতার মাধ্যমে একটি উপজেলার আমূল পরিবর্তন করতে। তার বাস্তব উদাহরণ হচ্ছে শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান।
শিবচর উপজেলায় যোগদান করে প্রায় তিন বছরেই তাঁর সততা ও কর্মদক্ষতায় পাল্টে গেছে উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক কার্যক্রম ও সার্বিক চিত্র। সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি দপ্তরের কর্মকাণ্ডে ফিরে এসেছে গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা। কমেছে জনভোগান্তি আর বৃদ্ধি পেয়েছে জনসেবার মান। শিবচর উপজেলাকে একটি উন্নত আধুনিক জনপদ হিসেবে গড়ে তুলতে নিরালসভাবে কাজ করছেন তিনি। জনবান্ধব এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কর্মকাণ্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন উপজেলার সৎ জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী ও সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
গত ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ২৪ তারিখে তিনি শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি উপজেলা প্রশাসনকে নিজের মতো করে ঢেলে সাজান। উদ্যোগ নেন দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত অনিয়ম ও দুর্নীতি দূর করে শিবচরকে একটি আধুনিক উন্নত জনপদ হিসেবে গড়ে তোলার। প্রথমেই তিনি নিজ কার্যালয়ে সিসি ক্যামেরার স্থাপন করে পুরো উপজেলা পরিষদ চত্বরকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেন। এতে উপজেলা পরিষদ চত্বরে কমে যায় অপরাধীদের আনাগোনা।সম্প্রতি উপজেলা চত্বরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজও দৃশ্যমান। শক্তহাতে টেনে ধরেন দুর্নীতিবাজ, ভূমিদস্যু, বালুখেকো, খাস জমি, খাল ও নদী দখলদারদের লাগাম। তাঁর সততা ও কর্মদক্ষতায় উপজেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা ফিরে আসতে শুরু করে। কমে যায় জনভোগান্তি আর বৃদ্ধি পায় জনসেবার মান।
নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন ও জনকল্যাণমুলক কাজ করে দক্ষ প্রশাসক হিসেবে উপজেলার সব শ্রেণি-পেশার মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন তিনি। প্রভাবশালী মহলের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে শত শত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে নজির স্থাপন করেছেন জনবান্ধব এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মাদকদদ্রুব্য, ভোক্তা অধিকার, মটরযান, মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল, বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন লঙ্ঘনের দায়ে বহুজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান জরিমানা আদায় করেন। উচ্ছেদ করা হয়েছে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা কয়েটিটি ইটভাটা।
এ ছাড়া অবৈধ দখলমুক্ত করা হয় উপজেলার বহু সরকারি রাস্তা, খাল, জলাশয়, নদী ও হাট-বাজার।সর্ব ক্ষেত্রেই রয়েছে এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পদচারণা। দাপ্তরিক কাজের ফাঁকে কথা বলেন উপজেলার সাধারণ মানুষের সাথে। শোনেন তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা। খোঁজখবর নেন সমাজের অবহেলিত গরিব-দুঃখী মানুষের। পরিদর্শন করেন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও উপজেলার উন্নয়ন প্রকল্প। কোথাও কোনো সমস্যা দেখলে নেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। তা ছাড়া গণমাধ্যম, ফেসবুক, মুঠোফোন ও ই-ই-মেইলের মাধ্যমে পাওয়া বিভিন্ন অভিযোগ দ্রুত সমাধান ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি।
তাছাড়া ২০২১ সালে ২১ জুন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধাপে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও শিবচর পৌরসভার নির্বাচনটি জনগণের আশা, আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটনায় শিবচরের মানুষের দোয়া ও ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়েন এই অফিসার।
জানা গেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যোগদানের এক বছর পরই মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।করোনাকালের শুরুতে থেকে এখন পর্যন্ত কভিড-১৯ মোকাবিলায় পুরো উপজেলার তিনি ‘রক্ষাকর্তা’র ভুমিকায় উপনীত হন। রাতে কিংবা দিনে করোনাকালীন সময়ে তিনি মাঠ ছাড়েননি।এজন্য তিনি নিজেই একবার মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমিত হন।তবুও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় একের পর এক উদ্যোগ গ্রহণ করে শুরুতেই তিনি পুরো উপজেলায় তাক লাগিয়ে দেন।
এছাড়াও করোনাকালীন উপজেলার বিভিন্ন গুচ্ছ গ্রামে ঈদের দিনে গরিব ও অসহায় মানুষের মধ্য নিজ অর্থায়নের খাবার বিতরনে এক অনন্য নজীর স্থাপন করেছেন তিনি।শিবচর উপজেলার উন্নয়নের রুপকার জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নুর ই আলম চৌধুরীর সহযোগীতায় উপজেলার হাসপাতালগুলোতে সংযুক্ত করেন হাইফ্লো অক্সিজেন ও আধুনিক সেবা সুবিধা।
পাশাপাশি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ কয়েকটি ইউনিয়নের ভূমিহীন পরিবারকে গৃহ নির্মাণ ও উপহার প্রদান করলেন ।
ইউএনও’র এসব সাফল্যের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে দত্তপাড়া এলাকায় শিক্ষক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন,‘সরকারের একজন উচ্চপদস্থ দায়িত্বশীল প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং মানবসেবক হিসেবে ইউএনও স্যার অসাধারণ একজন মানুষ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শিবচর তাঁর আগমনের পর থেকে গণমানুষের মৌলিক চাহিদা এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। কারণ সরকারের অর্পিত প্রতিটি দায়িত্ব পেশাদারিত্বের সাথে তিনি সঠিক ভাবে পালন করেছেন।যার কারণে শিবচরের প্রতিটি গ্রামে গ্রামে সরকারের বরাদ্দ সুষমভাবে বন্টন হয়েছে এবং গরিব অসহায় মানুষের দুয়ারে সরকারের উন্নয়ন পৌঁছেছে। তার ভালোবাসা এবং সততায় শিবচরের আপামর জনসাধারণ মুগ্ধ, যা আমাদের স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের চীফ হুইপসহ দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করার সহায়ক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।’
ইউএনওর কাজের প্রসংসা করতে গিয়ে মাদারীপুর জেলা তথ্য অফিসার মোঃ রিয়াদুল ইসলাম বলেন,” ইউএনও সাহেব যেভাবে মানুষের সাথে মিশে গেছে সত্যিই অভাক হওয়ার মতো।এলাকার লোকজন তাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করেন” কাল কখন অফিসে থাকবেন,আমাদের একটি সমস্যা নিয়ে আপনার কাছে আসবো” আসলেই তিনি সাধারন মানুষের অন্তরে স্থান করে নিয়েছেন।”
সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন,শিবচরকে একটি আধুনিক উন্নত উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। এটি আমার নৈতিক দায়িত্ব। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ স্যারের সহযোগিতা,আমাদের জেলা প্রশাসক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক এবং সমাজের বিশিষ্টজনেরা সব সময় আমার কাজে সহযোগিতা করছেন। তিনি আরো বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা জনগণের সেবক। নিজে কি পেলাম সেটা বড় কথা নয়, দেশ ও জাতীর জন্য কি করতে পারলাম সেটাই বড় কথা। নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সব সময় চেষ্টা করি মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবের। তাছাড়া আমি কর্মে বিশ্বাসী। আমার দায়বদ্ধতা থেকেই এ সকল উন্নয়নমূলক কাজ করছি। ছাত্রজীবন থেকে মানবসেবার প্রতি আমার দুুর্বলতা ছিল। বিসিএস প্রশাসনিক ক্যাডারে চাকরি হওয়ায়, নিজ দায়িত্ব থেকে মানবসেবা করার আরো বেশি সুযোগ পেয়ে যাই। প্রকৃতপক্ষে ভালো কাজ করলে সবাই সহযোগিতা করেন। সুতরাং যতটুকু পেরেছি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমি হয়তো একদিন এই উপজেলায় থাকব না, কিন্তু থেকে যাবে আমার কর্ম। যদি ভালো কাজ করে যেতে পারি, তাহলে শিবচরবাসী আমাকে আজীবন মনে রাখবে।”