শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধিঃ
শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: শশাংক চন্দ্র ঘোষের বিরুদ্ধে করোনাকালীন বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ, নারী কেলেঙ্কারীসহ একই হাসপাতালে ডাক্তার ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের অভিযোগের ভিত্তিতে দ্বিতীয় দফা তদন্ত শুরু করেছে তদন্তকারী কর্মকর্তা। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: শশাংক চন্দ্র ঘোষের অপসারনের দাবীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মচারীরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে।
মঙ্গলবার দুপুর ২ টার দিকে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রঙ্গনে এই কর্মসুচী পালন করা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অভিযোগ, করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাব মোকাবেলায় বিভিন্ন সময়ে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনুকুলে ২৮ লাখ ১৬হাজার ১শত ৬০ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। ওই টাকা শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শশাঙ্ক চন্দ্র ঘোষ অন্য কাউকে অবহিত না করে নিজেই আত্মসাৎ করেছে। এছাড়াও হাসপাতালে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিভিন্ন সময়ে লাঞ্চিত করে। হাসপাতালের নারী কর্মকর্তাদের সাথেও অশালীন আচরণ করেন বলে দাবী অভিযোগকারীদের। প্রতি বছরই কর্মকর্তা কর্মচারীদের নামে আসা বরাদ্দকৃত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন অভিযুক্ত শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শশাংকর চন্দ্র ঘোষ।
তার নানা অনিয়ম, দূর্নীতি ও নারী কেলেঙ্কারীর প্রতিবাদে আজ শশাংক চন্দ্র ঘোষের বিরুদ্ধে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে অভিযোগকারী চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ইতোপূর্বে তাদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে শরিয়তপুর সির্ভিল সার্জন ডা: এসএম আব্দুল্লাহ আল মুরাদসহ চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি আজ মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শশাংকর চন্দ্র ঘোষের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন। তদন্তকারী দল শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তথ্য প্রমানাদি গ্রহণ করেন।
এই সময়ে শরিয়তপুর সির্ভিল সার্জন ডা: এসএম আব্দুল্লাহ আল মুরাদসহ চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি অভিযুক্ত শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শশাংক চন্দ্র ঘোষের বিরুদ্ধে তদন্ত করেন। তদন্ত কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত কোন কিছু বলতে রাজি হননি তদন্তকারী দল।
অভিযোগকারী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জোবায়ের হোসেন জানান, শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: শশাংক চন্দ্র ঘোষ হাসপাতালের চিকিৎসকসহ মাঠ কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দকৃত ভাতা থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বঞ্চিত করেন। মাঠ কর্মীদের ১বছরের বেতন ভাতা আসলে ভ্যাট ও আয়করের নামে বড় অংকের টাকা কেটে রেখে নামমাত্র পরিশোধ করেন। দিনের পর দিন তিনি অনিয়ম করেই যাচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলেই চাকুরির ভয় দেখান। নারী বেশকয়েকজন নারী কর্মকর্তার সাথে ডা: শশাংকর চন্দ্র ঘোষের সাথে সখ্যতা। প্রায়ই ডা: শশাংকর চন্দ্র ঘোষের বিশ্রামাগারে গিয়ে দীর্ঘ সময় পার করেন।
শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মিঠুন বিশ্বাস বলেন, ডা: শশাংক চন্দ্র ঘোষের বিরুদ্ধে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অর্থ আত্মসাৎ, নারী কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। কর্তব্যরত চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আজ তদন্ত কর্মকর্তারা এসেছেন। তারা তদন্ত করছেন। আমরা ডা: শশাংক চন্দ্র ঘোষের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের লিখিত তথ্য প্রমানাদি তদন্ত কমিটির কাছে প্রদান করেছি।
শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শশাংক চন্দ্র ঘোষ বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। একটি স্বার্থন্বেষী মহল আমার ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে আমার বিরুদ্ধে নেমেছে।
তদন্ত কমিটি আহব্বায়ক, শরীয়তপুর সিভিল সার্জন ডা: এসএম আব্দুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, ডা: শশাংক চন্দ্র ঘোষের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা এসেছি। এখনও তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয়নি। আরো দুই দফা তদন্ত কার্যক্রম হবে। তদন্ত কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর আমরা আপনাদের সাথে কথা বলবো।