শিবচর(মাদারীপুর) প্রতিনিধিঃ
ঘুর্নিঝড় ‘জাওয়াদ’ এর প্রভাবে অতিবৃষ্টিতে মাদারীপুর জেলার শিবচরে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এর মধ্যে উপজেলার বিভিন্ন স্থানের সরিষা, মসুর, পেঁয়াজ, রসুন এবং কালোজিরা ব্যপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানা গেছে। অতিবৃষ্টিতে আবাদি জমির ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় প্রান্তিক কৃষকদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরেছে! টানা ৩ দিনের ভারী বৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্থ চাষীরা আর্থিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পরেছেন বলে জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ এর প্রভাবে গত শনিবার থেকে বৃষ্টি পরতে শুরু করে শিবচরে। এরপর রোববার ও সোমবারের অতিবৃষ্টির কারণে বেশির ভাগ ফসলের ক্ষেত তলিয়ে যায় পানিতে। সদ্য বোনা সরিষা, মাসকালাই, ধনিয়া,গম, কালোজিরা মূহুর্তেই ভেসে যায়। এছাড়া পেঁয়াজ, রসুন, আলুসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষেত পানিতে ডুবে যায়। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্তও অনেক জমিতে পানি আটকে থাকতে দেখা গেছে।
উপজেলার বহেরাতলা এলাকার কৃষকেরা জানান,’জমিতে পেঁয়াজ, রসুন, সরিষা, খেসারীসহ নানা জাতের ফসলের চাষ করা হয়েছে। তাছাড়া এ এলাকার বেশির ভাগ জমি নিচু। এই বৃষ্টিতে প্রায় হাটু পানি জমে গেছে কোন কোন জমিতে। সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।’
শিবচরে নলগোড়া এলাকার কৃষকেরা জানান,’জমিতে সেচ পাম্প করে পানি সরাতে হচ্ছে। বৃষ্টিতে ফসলের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। যা পুষিয়ে আনা সম্ভব হবে না।’
লবজান মোল্লা নামের এক কৃষক বলেন,’আমার ছেলে বিদেশ থেকে টাকা পাটিয়েছে। সেই টাকা দিয়ে আমি পিঁয়াজ ও রসুন লাগিয়েছি। আমার সব ফসলি জমিতে পানি জমে গেছে। এখন আমি কি করবো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। ফসল নষ্ট হলে আমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।’
শিবচর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার উপজেলা ২৭ মিলিমিটার এবং সোমবার ৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে শিবচরে। বৃষ্টির ফলে নদনদীতে পানিবৃদ্ধিসহ ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যায়। নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে চরাঞ্চলের ফসলি জমিতে পানি প্রবেশ করে। ফলে উপজেলার ৩ হাজার ৯৯৪ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এর মধ্যে, বোরো বীজতলা ৩০ হেক্টর, সরিষা ৯৭৫ হেক্টর, মসুর ৭৯২ হেক্টর, পেঁয়াজ ৯৩০ হেক্টর, রসুন ৫৬০ হেক্টর, কালোজিরা ২২০ হেক্টর, শাকসব্জি ১৮০ হেক্টর, গম ৭২ হেক্টর, ধনিয়া ৯৮ হেক্টর, খেসারী ৭৫ হেক্টর, মাসকলাই ৫ হেক্টর, আলু ১২ হেক্টর, ভূট্টা ৩৫ হেক্টর এবং মরিচ ১০ হেক্টর।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনুপম রায় জানান,’অতিবৃষ্টিতে উপজেলার প্রায় সকল স্থানের জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বৃষ্টিতে নদনদীর পানি বেড়ে ফসলের ক্ষেতে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ফসল পানিতে আংশিক নিমজ্জিত রয়েছে।’
Leave a Reply