শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি:
মাত্র তিন মিনিটের ব্যবধানে জন্ম হলেও একসঙ্গে বেড়ে ওঠা। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে পড়েছে একই প্রতিষ্ঠানে। সব ক্ষেত্রে ফলাফলও এক যমজ ভাই-বোন সাদিয়া ও জিহাদের।তারা এবার এসএসসি পরীক্ষায় শিবচর নন্দকুমার মডেল ইনস্টিটিউশন থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন ‘এ’ প্লাস পেয়েছে দুই জনই। তবে তাদের এমন সাফল্যের পেছনের গল্পটা সহজ নয়, বেশ কঠিন।
শিবচরের ভান্ডারীকান্দি ইউনিয়নের নেছার শিকদারের কান্দি গ্রামের কৃষক শওকত হোসেন চোকদার ও সাথী আক্তারের ৪ ছেলে মেয়ের মধ্যে এই সাদিয়া ও জিহাদই বড়।ছোট বেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী হওয়ায় গ্রাম থেকে পৌর এলাকামুখী হন তারা।এক সময় সৌদি আরব থাকার সুবাদে শিবচর বর্তমানে শিবচর পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় মাত্র ৪ শতাংশ জমি কিনে ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার জন্য বসতি স্থাপন করেছেন শওকত চোকদার।পাঁচ বছর ধরে সৌদি থেকে এসে নিজ এলাকায় কৃষি কাজ করেন।তবুও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় পিছ পা হননি তিনি।
তবে ছেলেমেয়ে ভালো ফলাফল করলেও আগামীতে তাদের কলেজের লেখাপড়ার খরচ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন বাবা-মা।বাবা মায়ের পাশাপাশি পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে দুই ভাইবোনই সরকারি কলেজে ভর্তি হতে চান।
সাদিয়া আক্তার বলেন, ‘আমি পড়ালেখা শিখে ভালো একজন ডাক্তার হতে চাই। স্কুলের স্যারেরা আমাদের অনেক সহযোগীতা করতেন।বাবা মা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেন।আমি ভবিষতে চিকিৎসক হয়ে চেষ্টা করবো বাবা মায়ের সম্মান ধরে রাখতে।সকলে আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
তবে জিহাদ ঢাকার ভালো কলেজে ভর্তি নিয়ে রয়েছেন চিন্তায়।পরিবারের অর্থনৈতিক কথা চিন্তা করে সে ঢাকার সরকারি কলেজে পড়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।ভবিষ্যতে সে প্রকৌশলী হবেন বলে জানান তিনি।
তাদের মা সাথী আক্তার জানান, স্বামীর স্বল্প রোজগারে সংসার চালিয়ে ছেলেমেয়ের জন্য আলাদা ব্যয় করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
তবুও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ মেটাতে তারা চেষ্টা করেন।বাসার কাজ কর্ম সেরে যেটুকু সময় পান সেটুকু সময় তার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার পেছনে ব্যয় করেন। এভাবেই এত দিন কষ্ট করে পার করেছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘সামনে ছেলেমেয়ে দুটিকে ঢাকার ভালো কলেজে ভর্তি করতে চাই।এতে তাদের উপর অনেক চাপ পড়বে।তবুও আমরা চেষ্টা করবো ওদের পড়াশোনা চালাতে।
তাদের প্রতিবেশী রেশমা আক্তার বলেন, সাদিয়া ও জিহাদ জমজ এই দুই ভাই বোন আমাদের পুরো গ্রামের গর্ব। অভাব অনটনসহ নানা প্রতিকুলতা উপেক্ষা করে নিজেদের অদম্য ইচ্ছে শক্তিতে এবারের এসএসসি পরিক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছেন দু’জন।আচার আচরনে তারাও ও অনেক ভালো।আমি তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করছি।
সাদিয়ার বাবা শওকত চোকদার বলেন, পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া আমার গ্রামের বাড়ি সাথে সামান্য মাঠের জমি আছে আমার।যখন সৌদি ছিলাম ১৭/১৮ বছর আগে শিবচরে ৪ শতাংশ জমি কিনে এই বাড়ি করি।বর্তমানে কৃষি কাজ করে সংসারটা চালিয়ে নিচ্ছেন তিনি। সংসারে কিছু অভাব-অনটন থাকলেও লেখাপড়া থেকে একচুল পিছু হটেনি তিনি।তার ছেলে মেয়েরা এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়ায় আমরা উচ্ছাসিত। তবে ভবিষ্যতে তাদের শহরে রেখে ভালো কলেজে পড়াশোনা করাতে অনেক খরচ করা নিয়ে চিন্তিত তিনি।
এ বিষয়ে শিবচর নন্দকুমার মডেল ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ বলেন, অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা জমজ দুই ভাই বোন সাদিয়া ও জিহাদ।তারা খুবই মেধাবী। স্কুল থেকে যখন যে সুবিধা দেওয়ার তা তারা দিয়েছেন। পড়াশোনায় তারা যেন আরো আগাতে পারে এজন্য বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকেরা এই দুই ভাই বোনের প্রতি খেয়াল রাখতো।তাদের এমন সাফল্যে অভিভুত স্কুলের শিক্ষকরা। তাদের উত্তর উত্তর সফলতা কামনা করেন তিনি।