শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি:
মাদারীপুরের শিবচরে আড়িয়াল খাঁ নদের উপর নির্মিত বহুল কাঙ্ক্ষিত ‘লিটন চৌধুরী সেতুটি উদ্বোধন হবে আগামীকাল শনিবার (৪ নভেম্বর। আর এই সেতুটি উদ্বোধন উপলক্ষে উৎসবের আমের বিরাজ করছে উপজেলার সর্বত্য।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, সেতুটি উদ্বোধন হলে শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল, নিলখী, দত্তপাড়া ইউনিয়ন ফরিদপুরে ভাঙ্গা উপজেলার কালামৃধা,আজিমনগর ও মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কবিরাজ পুর,হোসেনপুর এলাকার অধিকাংশ এলাকাসহ আশেপাশের এলাকার লক্ষাধিক মানুষের ভোগান্তির অবসান হবে।এসব ইউনিয়নের প্রায় সবগুলো গ্রামকে সরাসরি সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে।
শুক্রবার বিকেল সরেজমিনে সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়,উদ্বোধন উপলক্ষে প্রায় সকল কাজ সম্পন্ন হয়ে।আশেপাশের অনেক লোকজন সেখানে দেখতে এসেছেন। তাদের দাবি, আগামী কাল উপজেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি সড়ক পথের যোগাযোগ স্থাপন হবে।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে উপজেলা সদরে পৌঁছানো যাবে এই সেতু দিয়ে। শুধু তাই নয় শিবচর রেল স্টেশন থেকে সহজেই যেতে পারবে নিজ গন্তব্য। ফলে ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে নদী পাড়ের মানুষের।
শিবচর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে,৫৫০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৯.৮০ মিটার প্রস্থের সেতুটি ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর শুরু হয় সেতুটির নির্মাণ কাজ। তে স্প্যান সংখ্যা ১১টি এবং পিয়ার সংখ্যা নয়টি। সেতুটির পাইলের সংখ্যা ১২৩টি, পাইলের দৈর্ঘ্য ৪৮ মিটার। সেতুর জন্য অ্যাপ্রোচ সড়কের (সংযোগ সড়ক) দৈর্ঘ্য ১.৫০ কিলোমিটার। ৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটির নির্মাণ কাজ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মো. মইন উদ্দীন বাঁশি ও হা-মিম ইন্টারন্যাশনাল।সেতুটিতে স্প্যান সংখ্যা ১১টি এবং পিয়ার সংখ্যা ৯টি। সেতুটির পাইলের সংখ্যা ১২৩টি, পাইলের দৈর্ঘ্য ৪৮ মিটার। সেতুর জন্য অ্যাপ্রোচ সড়কের (সংযোগ সড়ক) দৈর্ঘ্য ১.৫০ কিলোমিটার। সেতুটিতে সড়ক বাতিও সংযোগ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান,আড়িয়াল খাঁ নদ পার হয়ে শিবচরসহ ঢাকা যেতে তাদের নৌকায় বা ট্রলারে নদী পাড় হতে হয়। বর্ষায় উত্তাল নদী আর অধিক যাত্রীর জন্য ট্রলার চালকদের অধিক সময় ঘাটে বসে থাকতে হতো। এছাড়া ট্রলার না পাওয়াসহ নানাবিধ ভোগান্তি মাথায় নিয়ে শিবচর যেতে হয় এই অঞ্চলের মানুষের!।অনেকসময় নদী পার হওয়ার কারনে রোগী ও মালামাল নিয়ে রাজৈর বা ফরিদপুর যেতে হতো তাদের। আগামীকাল’ সেতুটি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান হতে যাচ্ছে।
দত্তপাড়া ইউনিয়নের চর তাজপুর এলাকার তানজিল চৌধুরী বলেন,আড়িয়াল খা নদের তীরে আমাদের বাড়ি। বাড়ি থেকে নদী পার হওয়ার জন্য আমাদের এলাকার অনেক লোক শিবচরে জমি কিনে বাড়ি করেছে।এলাকার লোকজন নদী পার হওয়ার কারনে উপজেলা সদরের অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলো।সেতুটি আগে হলে আমাদের আর কষ্ট করতে হবে না।তাছাড়া এলাকার মানুষ অনেকভাবে উপকৃত হবেন।
একই ইউনিয়নের উৎরাইল নয়াবাজার এলাকার শাজাহান বলেন, নদী পার হওয়ার জন্য অনেকসময় জরুরি কাজেও শিবচর যেতে পারিনি। আমাদের এলাকার শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট হয় উপজেলা সদরে অনেক দূর ঘুরে যেতে। সেতু চালু হলে সহজেই শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে।
তৌকির আহমেদ চৌধুরী অলিক নামে একজন বলেন, নদীর পাড়ে উতরাইল এলাকায় আমার বাড়ি।মাত্র ১০ মিনিটের পথ উপজেলা সদর।কিন্তু আড়িয়াল খাঁ আমাদের উপজেলা সদর থেকে বিভক্ত করে রেখেছে। ইনশাআল্লাহ কাল থেকে আমাদের এই ভোগান্তির অবসান হবে। আমরা চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী মহোদয়ের নিকট বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।
শিবচর উপজেলা যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক আজিজুল হক গৌড়া সন্ধ্যায় গেছেন সেতুটি দেখতে।সেখানে তিনি বলেন, একসময় একটি নদী পার হয়ে উতরাইল হাটে যেতে অনেক কষ্ট হতো আমাদের।আমাদের এলাকার উৎপাদিত পন্যের বেশিরভাগই এই উতরাইল হাটে বিক্রি হয়।সেতু উদ্বোধন হলে সেই ভোগান্তি দূর হবে।আমরা আমাদের নেতা নুর ই আলম চৌধুরীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
শিবচর উপজেলা প্রকৌশলী কে এম রেজাউল করিম জানান, শিবচরের উন্নয়নের রুপকার ও জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নুর ই আলম চৌধুরী এমপি শিবচরকে উন্নয়নের রোল মডেলে রুপান্তর করেছেন।তারই ধারাবাহিকতায় শিবচরে পশ্চিম দিকে আড়িয়াল খাঁ নদের উপর সেতুটির কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী এমপি মহোদয় আগামীকাল সেতুটির উদ্বোধন করবেন। সেতুটির উদ্বোধনের পরে মাদারীপুরের রাজৈর ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কিছুগ্রামের লোকজন শিবচর দিয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ঢাকা যেতে পারবে।সেতুটির চালু হলে এই এলাকার উৎপাদিত কৃষি পন্য সহজেই বাজারজাত করতে পারবে।