1. rafiqulislamnews7@gmail.com : Rafiqul Islam : Rafiqul Islam
  2. jmitsolution24@gmail.com : jmmasud :
বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৪০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
সৌদি আরব থেকে দেশে এসে স্ত্রী -সন্তানদের সাথে দেখা করতে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার পথে যুবকের মৃ*ত্যু শিবচরে আলোচিত রাকিব হ*ত্যা মাম*লার দুই আ*সা*মী গ্রে*ফ*তার শিবচরে শ্রেষ্ঠ গুণী শিক্ষক হলেন ইদ্রিস ও লাইলুন নাহার শিবচরে ৩ মাসের শিশুকে নদীতে ফেলে হত্যা করলো মা, অভিযুক্ত মা মানসিক ভারসাম্যহীন দাবী শিবচরে মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে বৃত্তি প্রদান ক্যাম্পাসে ভালোবাসায় সিক্ত ‘জুলাই কন্যা’ মাদারীপুরের তন্বী ডাকসু নির্বাচনে শিবচর থেকে প্রার্থী হয়েছেন যারা শিবচর উপজেলা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্সপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠিত ও নতুন কমিটি গঠন যোগদানের ২২ দিনের মাথায় শিবচর থানার ওসি প্রত্যাহার শিবচরে শিক্ষার্থীদের মাঝে ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা বিতরণ

ভাষা আন্দোলন করেও শিবচরের গোলাম মোস্তফা পায়নি কোন সম্মাননা

  • প্রকাশিত : শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪, ৯.৫৮ এএম
  • ৭৯৫ জন সংবাদটি পড়েছেন।

রফিকুল ইসলাম রাজা-

১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। মাতৃভাষা রক্ষার দাবিতে যখন উত্তাল রাজধানীসহ সারা দেশের রাজপথ।তখন মাতৃভাষা বাংলার জন্য রাজপথে আন্দোলনকারী মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার গোলাম মোস্তফ আকন্দ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তৎকালীন ফরিদপুর জেলার বর্তমান মাদারীপুর জেলার শিবচরে বাংলা ১৩৩২ বঙ্গাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন গোলাম মস্তফা রতন। ছোট বেলা থেকেই ছিলেন একজন প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। ভাষা আন্দোলনে ঢাকায় অংশ নেওয়ার জন্য কয়েকটি জেলা ছাত্রদের নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করেন।

তিরি তখন বরিশাল বিএম কলেজের বিএ ক্লাসের ছাত্র।মুক্তিকামী, সংগ্রামী মনোভাবের অধিকারী গোলাম মোস্তফা মাদারীপুর থেকে সেসময় ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। প্রায় তিন শতাধিক ছাত্র-তরুণ নিয়ে মাদারীপুর থেকে লঞ্চে করে ঢাকায় গিয়ে পৌঁছান ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভোরে।সদরঘাট থেকে মিছিল নিয়ে পৌঁছান ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছে। একাত্মতা ঘোষণা করেন ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারী ছাত্র-জনতার সঙ্গে।

তবে গোলাম মোস্তফার জীবদ্দশায় পাননি কোন রাষ্ট্রীয় খেতাব।পাননি কোন পুরস্কার। একুশে পদক বা স্বাধীনতা পদক ভাগ্যে জুটলে শান্তি পেতেন গোলাম মোস্তফা আকন্দ।২০০৮ সালে ব্রেন স্ট্রোকের পর থেকে তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থেমে গিয়েছিলো। প্রায় ১২ বছর ধরে শয্যাশায়ী এই ভাষা সৈনিক গোলাম মোস্তফা আকন্দ’র আকুতি ছিলো রাষ্ট্রীয় কোনো সম্মাননার। বুক ভরা আক্ষেপ নিয়ে অবশেষে ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই মৃত্যু বরন করেন তিনি।গত দেড় বছর আগে তার স্ত্রী লাইলি বেগমও মৃত্যু বরন করেন।

মঙ্গলবার সরেজমিনে শিবচর উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের চর রামরায়ের কান্দি গ্রামে তার বাড়িতে গেলে কথা হয় তার সন্তানদের সাথে। পরিবারের সকলের দাবী একটুখানি রাষ্ট্রীয় সম্মাননা।

জানা যায় ২০০৮ সালে ব্রেন স্ট্রোকের পর থেকে তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থেমে গিয়েছিলো তার। ব্যক্তি জীবনে ৪ ছেলে ও ৫ মেয়ের জনক তিনি।অসুস্থ হলেও পরিবারের লোকজন তাকে সুযত্নে রেখেছিলেন। জীবনের শেষ দিকে এসেও বিভিন্নভাবে সরকারের নজর কাড়তে চেয়েছিলেন। চাওয়া ছিলো একটি রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। কিন্তু তিনি তা পাননি।

ভাষা সৈনিক গোলাম মোস্তফা আকন্দের পরিবার সুত্রে জানা যায়, ‘শিবচরের তৎকালীন সময়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্থানীয় নেতা রমনীমোহন চক্রবর্তীর বিশ্বস্ত লোক ছিলেন তিনি। ওই সময় তাকে ২০ দিনের মতো কারাবরণও করতে হয়েছিল।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় বরিশাল বিএম কলেজে বিএ ক্লাসের ছাত্র তিনি। এ অঞ্চলের ভাষা আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হলে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। ভাষা আন্দোলন যখন তুঙ্গে, ৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মাদারীপুর, শরিয়তপুর ও বরিশাল অঞ্চলের প্রায় ৩ শতাধিক ছাত্র-তরুণ নিয়ে লঞ্চে করে ঢাকা পৌঁছান তিনি। ২১ ফেব্রুয়ারি মিছিল করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকায় যান।

৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে স্থানীয়ভাবে কালমৃধা পোদ্দার বাড়ি মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন। সেসময় স্থানীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেন।

ভাষা আন্দোলন পরবর্তী সময়ে চাকরি করেছেন উপজেলার ভদ্রাসন জেসি একাডেমি ও উমেদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে (তৎকালীন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে)।

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে কারাবরণ, ৫২’র ভাষা আন্দোলনে গ্রাম থেকে গিয়ে রাজপথে আন্দোলন, ৭১’এ স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করা সৈনিক সারাজীবন উপেক্ষিতই রয়ে গেছেন। ভাগ্যে জোটেনি একটু সমাদর, রাষ্ট্রীয় কোনো সম্মাননা বা মুক্তিযোদ্ধার খেতাব।

গোলাম মোস্তফার তৃতীয় ছেলে মিজানুর রহমান বলেন, ভাষা আন্দোলনের সময় গ্রাম থেকে যাওয়া পুরো মিছিলের নেতৃত্ব দেয়েছিলেন বাবা। এ কথা মনে হলেই গর্বে বুকটা ভরে উঠে আমাদের। পুলকিত হই একজন ভাষা সৈনিকের সন্তান হিসেবে পরিচয় দিতে পেরে।

তিনি আরো বলেন, কিন্তু আক্ষেপেরও শেষ নেই। এই মহান ভাষা সৈনিকের মূল্যায়ন কেউ করেনি। সরকারি কোনো সম্মাননা তিনি এ পর্যন্ত পাননি। তবে ২০১২ সালে বেসরকারি সংগঠন ‘এইম ওয়ে কর্পোরেশন লিমিডেট’ বাবাকে সম্মাননা দিয়েছিল। সে সময় ৫০ হাজার টাকার চেক দিয়েছিলেন তারা। সম্মাননা বলতে এতটুকুই।

ভাষা সৈনিকের ছোট ছেলে জাহিদ হোসেন বলেন,বাবার ২১ শে পদক পাওয়ার জন্য ২০১৪ সাল থেকে প্রতি বছরেই সরকারের নিকট আবেদন করেছি।কোন কাজ হলোনা।কি কারনে পাওয়া গেলো না তা জানিনা।বাবা জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারেনি।তাই এ বছর আর আবেদন করা হয়নি।করেই কি হবে? এতো বছর আবেদন করেতো কিছু পেলাম না।মাদারীপুর ডিসি অফিস থেকেও আবেদন করা হয়েছিল। আগের ডিসি স্যার ( ড. রহিমা খাতুন) তিনি অনেক বার আবেন করেছিলেন।তার আগের ডিসি স্যারও আবেদন করে ছিলেন তাতেও কোন কাজ হলো না।

ভাষা সৈনিককে নিয়ে লেখা “ভাষা সংগ্রামী গোলাম মোস্তফা আখন্দ: জীবন ও কর্ম” বইয়ের লেখক স্থানীয় আবু বক্কর শিকদার বলেন, আমাদের চাওয়া ছিল মৃত্যুর আগেই যেন গোলাম মস্তফা রতন একটা সরকারি স্বীকৃতি পান।তিনি আজ দুনিয়ায় নেই।তাই তাকে যেন সরকারি স্বীকৃতি দেয়া হয়। সে অনেকবার ২১ পদকের জন্য আবেদন করেছে। আজ পর্যন্ত কোনো আবেদনই গ্রহণ করে তাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি।

মাদারীপুরের ভাষা সংগ্রামী গোলাম মোস্তফা রতনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আজও মেলেনি। ফলে হতাশা বিরাজ করছে তার পরিবারসহ জেলাবাসীর মাঝে। এদিকে, ভাষা আন্দোলনের ৬৯ বছরেও, পটুয়াখালীর ভাষা সৈনিকরা সরকারের কোন সহযোগিতা না পাওয়ায়, চরম আক্ষেপ আর হতাশা তাদের পরিবারের মাঝে। শুধু জেলায় শহীদ স্মৃতি পাঠাগার নির্মাণ করা হয়েছে।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমিতো নতুন এসেছি শিবচরে।বিষয়টি আমার জানা নেই।আমি খোজ নিয়ে তার পরে আপনাদের জানাতে পারবো।আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি। আমাদের প্রত্যাশা মহান এ ভাষা সৈনিক যেন রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি পান।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022
Don`t copy text!