প্রতিনিধি রাজৈর
“আমার বাবায় বলেছিল পুরনো ঘর মেরামত করার দরকার নাই। আমি বিল্ডিং করে দিব। কিন্তু সেটা আর হয়নি। পুরনো ঘরেই থাকি। ঘরের চাল দিয়ে পানি পড়ে। আমরা দুজনেই অসুস্থ। প্রতিমাসে আমাদের ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। এসব টাকা পাব কোথায়? আমার বাবায় বেঁচে থাকলে বুড়ো বয়সে আমাদের আর কষ্ট করতে হতো না। আমার বাবার রেখে যাওয়া ১১ মাসের মিথিলা এবার ১৮ তে পা দিয়েছে।সে মাদারীপুরে তার নানার বাড়ি থেকে পড়াশোনা করে। মাঝে মাঝে আমাদের কাছে ফোন করে।এমন কথা গুলো কেঁদে কেঁদে বলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের উত্তর হোসেনপুর গ্রামের নিহত লিটনের মা আছিয়া বেগম।
তিনি আরো বলেন, ‘আমার ছেলের তো কোন দোষ ছিল না। আমার একমাত্র ছেলেকে কবরে শুইয়ে রেখে কিভাবে বেঁচে আছি বলতে পারেন? এসময় তিনি গ্রেনেড হামলাকারীদের বিচারের রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান সরকারের কাছে।
পরিবার ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, যেখানে আওয়ামী লীগের মিটিং মিছিল সেখানেই লিটন মুন্সীর ছিলো সরব উপস্থিতি। তিনি ছিলেন দলের নিবেদিত কর্মী। এই টানেই লিটন সেদিন সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকা গিয়েছিলে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউ-এ অনুষ্ঠিত শেখ হাসিনার সমাবেশে যোগ দিতে গিয়ে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় নিহত হন তিনি। লিটনের পরিবারে শোকের ছায়া এখনও কাটেনি।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। তবে গত ৩ বছর ধরে কেউ খবর নেয়নি তার বাবা-মায়ের। এখন রোগে-শোকে অসহায় জীবন যাপন করছেন লিটনের বৃদ্ধ মা-বাবা। পুরোনো ঘরের চাল দিয়ে পানি পড়ে। সহায় সম্বল জমি-জমা কিছুই নেই তাদের।
এছাড়াও ওই হামলায় আহত হয়েছিলেন মাদারীপুর সদর উপজেলার ছিলারচর ইউনিয়নের পশ্চিম রঘুরামপুর গ্রামের রামকৃষ্ণ নামে একহন। সেদিন সে তার চোখ হারিয়ে এখন চলছেন তার স্ত্রীর আয়ের উপর। তার স্ত্রী গরুর গোবর দিয়ে জ্বালানী বানিয়ে বিক্রি করে ৬ সন্তানসহ সংসার চালান।
আহত রামকৃষ্ণ বলেন, সেদিন সভায় গিয়েছিলাম আওয়ামীলীগ করি বলে। ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আহত হয়েও ভাগ্যের জোরে বেঁচে আছি। চোখ হারিয়েছি। তবে পাইনি কোন সহায়তা। তাতেও দু:খ নেই। আমি চাই সকল আসামীকে আটক করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হোক।
আহত আরেক জন কালকিনি পৌরসভার কবির হোসেন।হামলায় তার বাম হাতে আঘাত পান তিনি।এতে ধীরে ধীরে অচল হয়ে গেছে তার হাতটি।বর্তমানে তরকারি বেচা কেনা করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি।
এ ব্যাপারে মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা জানান, ‘আমরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে নিহত-আহত পরিবারকে সহযোগিতা করেছি। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও সহযোগিতা করেছেন। ভবিষ্যতেও আমরা তাদের পাশে থাকব। যদি কারও সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, তাহলে আমরা দলের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করব।’
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় মাদারীপুরের যারা আহত-নিহত হয়েছে, আমরা তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করবো। তাদের যে কোন বিষয়ে আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।